★ একটি পতাকার জন্য একটি মহাকাব্য ★ ( কবিতা )

★একটি পতাকার জন্য একটি মহাকাব্য ★ ( কবিতা )

জাফর আহমদ প্রধান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা :             প্রতিদিনের মত সেদিনও রাত গড়িয়ে সকাল হলো

সূর্য উঠলো পূর্বাকাশ রাঙিয়ে
সবার মনে আবেগ, উৎকন্ঠা আর প্রাত্যাশা
সবকিছু মিলিয়ে এলো দুপুর।
কিন্তু একি বিস্ময় !

বানের জলের স্রোতের মতো মানুষ এসেছে ঢাকায়
গন্তব্য রেসকোর্স ময়দান, হাতে লাঠি, ফেসটুন, ব্যানার, পতাকা
উদ্বেলিত জনতার মিছিল যেন
নদীর প্রবল প্লাবনের মত ছুটে চলেছে।

একটাই উদ্দেশ্য আজ বঙ্গবন্ধু মহাকালের মহাকাব্য পাঠ করবেন।
যে কবিতা তিনি বাঙালিকে দিবেন
বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্খিত পাতাকা।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের রূপকার মহাকবি শেখ মুজিবের কন্ঠে
স্বাধীনতা সনদ মহাকাব্য শুনতে এসেছে
সবাই সে মাহাকাব্যের নাম একটি পতাকা একটি জাতীয় সঙ্গীত
দখলদার হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্নহ্ন করার মারনাস্ত্র।
তিনি কবিতা পাঠ করবেন,
কোটি বাঙালি শুনবে।

তারপর ঝাঁপিয়ে পরবে মরণ জয়ী স্বাধীনতার মহারণে,
যে স্বাধীনতার জন্য বাঙালি হাজার বছরের রণ প্রস্তুতি,
এ যেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি যুদ্ধ ঘোষনার পূর্ব মুহুর্ত
মানুষের হৃদ কম্পন বেড়েগেছে
মানুষ দৌড়াচ্ছে যেন সবার কন্ঠে স্লোগান উচ্চারিত,
প্রচন্ড ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠলো দশ দিক
একি দৃশ্য দেখছি আজ
একি মহা বিপ্লবের মুক্তিকামি বাঙালির উচ্ছাসিত গণ চেতনার
গণ জোয়ারের, জনতার স্রোত প্রবল গতিতে বেগবান
চলছে মানুষ সমুদ্র গর্জনের উচ্চ উত্তল তরঙ্গ জন সমুদ্রে।

শহর ঢাকা রাজধানীর অলিগলি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
মানুষ নেমেছে মিছিলে
জন স্রোত রেসকোর্সের দিকে ধাবমান
সেকি প্রবল শক্তি
ফুসে উঠছে জন তরঙ্গ
সূর্য মধ্যাকাশে আসার পূর্বেই
বিশাল ঘোড় দৌড়ের মাঠ
কানায় কানায় পরিপূর্ণ
আশে-পাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গা
লোকে লোকারন্য
কবি, শিল্পি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী,
চিকিৎসক, স্থপতি, ভাস্কর থেকে ছাত্র-যুবক
নৌকার মাঝি, কৃষক শ্রমিক পেশাজীবি
সবাই সমবেত হলো বাংলার উদার বিস্তৃত বক্ষে
মেলেধরা এই জনসমুদ্রে।

একি অপূর্ব দৃশ্য ?
এমন প্রবল সাহসে উচ্ছসিত জনতার ঢল
দেখেনি পৃথিবীর মানুষ
সবাই প্রতীক্ষায় একজন মহামানব আসবেন
এই বিশাল জনসমুদ্রে শোনাবেন মহাকালের মহাকাব্য
শোনাবেন স্বাধীনতার মহা মন্ত্র
শোনাবেন একটি পতাকার মাহাকাব্য
শোনাবেন মহা-মুক্তির অমিয় বাণী
সাহস ছড়িয়ে দিবেন সবার প্রাণে
তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
মহাকবি এলেন, মঞ্চে উঠলেন
প্রিয় দেশ বাসির প্রতি হাত নাড়লের
বিশাল জনতার করতালি
আজ স্লোগান মুখরিত তল্লাটের দিকে
প্রচন্ড আত্ম বিশ্বাসে বলিয়ান
বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধে
মহা সিপাহশালার শেখ মুজিব
মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে
জলদ গম্ভির কন্ঠে শব্দের বিস্ফোরণ ঘটালেন
ভাইয়েরা আমার বিপুল উচ্ছাসে জাগ্রত জনতার মহাসমাবেশে মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ
মহাকালের মহাকাব্য শোনার জন্য মাত্র ১১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মহাকালকে স্তব্ধ কওে শুনালেন তার ভ‚বন মোহিনী কবিতাখানি
সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ঘৃণার উদগিরন ঘটালেন
আগ্নেয়গিড়ির লাভার মতো
কবিতার একটি লাইন শেষ করেন
আর অগনিত মানুষের বৈভব গর্জে উঠে স্লোগানে
করতালিতে মুখর হয় ওপারের নীল আকাশের শূন্যতা
এমনি এক অনন্য সাক্ষী হয়ে রইলাম আমি
তোলারাম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র জাফর আহমদ।

এই তো সেদিন নিস্ক্রিয় হলো না কেউ সবাই যেন
সংকল্পের সক্রিয় প্রত্যয দৃঢ় সাহসে বলিয়ান
কারণ মহাকবিতার কবিতা শেষ করলেন
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
জয় বাংলা।

এই একটি কবিতা এনে দিয়েছিল ৩০ লক্ষ প্রাণ
এই একটি কবিতার জন্য দিয়েছিল
চির হাজার বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা।

add-content

আরও খবর

পঠিত