নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম দুইটি দল হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় পার্টি (জাপা)। দীর্ঘ সময় চলে গেলেও নারায়ণগঞ্জে ঘুরে দাড়াতে পারেনি এ দুই দলই। আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে যেমনি তাদের শির্ষ নেতাকর্মীদের সরব দেখা যায় না। তেমনি দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষে কর্মীদের নিয়ে বসার জন্যও উল্লেখিত দুই দলেরই নেই কোন স্থায়ী ঠিকানা।
কেন্দ্রীয় নানা ঘোষনা, কর্মসূচীতে কখনও কখনও দলগুলোর পক্ষে সভা-সমাবেশে নেতাদের জোড়ালো বক্তব্য উপস্থাপন করতে দেখা গেলেও বাস্তবায়নের কোঠায় শূণ্য। বেশীরভাগ অনুষ্ঠানই আবার নিজ উদ্যোগে কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল ও মাঠ ব্যবহার করে সমাপ্তি করা হয়। এতে করে দিন দিন যেন অস্তিত্ব বিলিনের পথে।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি পরিবর্তনের মুখ দেখলেও নেই স্থায়ী কার্যালয় । তাই নেতাদের বাড়ি কিংবা অফিসে সব কার্যক্রম চালাচ্ছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। প্রায় পাঁচ বছরেও কার্যালয় না পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তবে নানা অযুহাতে এড়াতে ব্যস্ত জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করায় ২০১৭ সালের মার্চে ভেঙে দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য স্থান দেখতে বলা হলেও চার বছর চার মাসে সে স্থান ঠিক করতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। শহরের কালির বাজার ফ্রেন্ডস মার্কেটে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের অফিসকে অস্থায়ী কার্যালয় বানিয়ে সেখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হতো মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নিজস্ব অফিসও। তবে এখন আর সেটি হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের তৃতীয় তলার অফিসটি নিজের কাজেই ব্যবহার করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার রাগান্বিত সুরে বলেন আপনি জানেন না, আমিই তো এই কার্যালয় করেছি। আমি যখন ছিলাম তখন ছিল। এরপর যারা ছিল তারা তো করেনি। যেহেতু এখন আপনি আবারো দায়িত্ব পয়েছেন সেক্ষেত্রে কার্যালয়টি করতে আপনি কে উদ্যোগ নেবনে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আমি যেহেতু আছি, পদক্ষেপ নিবো।
মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের চোপের কারণে আমরা কোন কিছুই করতে পারিনা। একটি কমিউনিটি সেন্টারও নিতে গেলে বাধাগ্রস্থ হতে হয়। তাছাড়া সিটি করপোরেশন যখন কার্যালয়টি ভেঙ্গেছে তখন মেয়র আইভী অঙ্গিকার করেছিলেন তিনি আমাদের দেয়া সে অঙ্গিকার এখনো বাস্তবায়ন করেনি।
অপরদিকে, পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় পার্টি দলটিও কোন স্থায়ী কার্যালয়ের মুখ দেখেনি। এরআগে প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান জীবীত থাকতে কার্যালয় সহ নেতাকর্মীদের উচ্ছাসে দলটিতে প্রাণ ছিল বলে দাবী নেতাকর্মীদের। ওইসময় শহরের বঙ্গবন্ধু রোডের ওই কার্যালয়ে বসেই পরিচালনা হতো জাপার রাজনৈতিক কার্যক্রম। শুনতেন সকল নেতাকর্মীর সুখ-দু:খের কথা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান।
সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি আসনের মধ্যে দুইটিতে জাতীয় পার্টির এমপি রয়েছেন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে চারবারের নির্বাচিত এমপি বড় ভাই নাসিম ওসমানের ইন্তেকাল হলে সেলিম ওসমান এমপি নির্বাচিত হন। দলটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদও পেয়েছেন তিনি। আরেকজন হলো, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। তাাছাড়া আহ্বায়কে ভর করেই চলছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের এর মৃত্যুর পর অনেকটাই নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা।
দলটির সূত্রে আরো জানিয়েছে, ইতমধ্যে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও সম্মেলনের পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষনা হবে। সেখানে জেলার আহ্বায়ক এর দার্য়িত্বে পেয়েছেন আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব হানিফ। মহানগরের আহ্বায়ক আকরাম আলী শাহীন ও সদস্য সচিব আফজাল হোসেন। এতে করে সদস্য সচিবের পদ হারালেন এডভোকেট আব্দুল মজিদ খোন্দকার। তবে তাঁর দাবি পদেই বহাল রয়েছেন তিনি। আর সম্মেলনের পরই কমিটি হবে, তখন দেখা যাবে।
এদিকে সানাউল্লাহ সানু, আকরাম আলী শাহীন, এমপি সেলিম ওসমান বলয়ের লোক হিসেবেই পরিচিত বলেই তাদের কথার বাহিরে চলা অনেকেই আবার দূরে সরে আছে বলেও দাবী তৃণমূলের। তবে কমিটি গঠন হলেও দানবির সাংসদ ও সোনারগাঁয়ে মানবতার ফেরিওয়ালা খিতাব নেয়া সাংসদ খোকা থাকলেও দলীয় কার্যালয়টি গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ব্যর্থ কেন? প্রশ্ন রাজনৈতিক বোদ্ধাদেরও।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি নেতা আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু বলেন, দলীয় কার্যালয়ের ব্যাপারে কথা চলছে। ইতমধ্যে আমরা এও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সদর ও বন্দরে দুইটি কার্যালয় হবে। তবে আমরা কার্যালয়টি খোলামেলা জায়গায় নিতে চাচ্ছি। যার জন্য দেরী হচ্ছে। রাজনৈতিক বিষয় যেহেতু, কোন বিল্ডিংয়ে নিলেও মানুষের যেন অসুবিধা না হয়, সে বিবেচনাই করছি। তবে শিঘ্রই হবে বলে প্রত্যাশা করি।
এডভোকেট আব্দুল মজিদ খোন্দকার বলেন, কোন কমিটি হয়নি, যে যে পদে ছিল সবগুলোই বহাল রয়েছে। ঈদের পর সম্মেলন হবে। তারপর দেখতে পারবেন। তিনি বলেন শহরের মধ্যে দলীয় কার্যালয়টি হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। এটা না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দলে নেতাকর্মীরা দূরে আছে। তাছাড়া দুইজন সাংসদও চেষ্টা করছেন। এমপি সেলিম ওসমান ভাড়া দিতে রাজি আছেন তবে কার্যালয় পাওয়া যাচ্ছেনা। কারণ ছোট রুমে তো আর হবে না, তাই বড় কার্যালয়ে সন্ধানে আছি। তবে সম্মেলনের পরে হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।