এমপি শামীম ওসমানের খেলা হবে কোলকাতাও হুল্লোড়

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : সময়টা ২০১৩ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি সাংসদ একেএম শামীম ওসমান এক কর্মী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে খেলা হবে সংলাপটি প্রথম উচ্চারণ করেন। তখন থেকেই এই সংলাপ নেট দুনিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। তবে নতুন করে আলোচনায় এসেছে খেলা হবে সংলাপটি। শামীম ওসমানের এই সংলাপ এখন ওপার বাংলা অর্থ্যাৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে হৈ- হুল্লোড় ফেলে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রজনতার মুখে এখন কেবল খেলা হবে। এমনকি এ নিয়ে গানও তৈরি হয়ে গেছে, সে গান চলছে বিভিন্ন পাড়ার অনুষ্ঠানে। বলতে গেলে সব রাজনৈতিক দল গানে, মিছিলে স্লোগানে সবখানে খেলা হবে স্লোগানকে রেখে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিধান সভা নির্বাচন এবার খেলা হবে সংলাপের দখলে।

পশ্চিমবঙ্গে এই খেলা হবে শব্দের ব্যবহার নিয়ে ভারতের এবিপি আনন্দ টেলিভিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংলাপটি প্রথম ব্যবহার করেন বীর ভূমের কেষ্ট দা হিসেবে পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ অনুব্রত মন্ডল। ধীরে ধীরে এই সংলাপ বা বক্তব্যের অংশ স্লোগানে পরিণত হয়। শুধু তৃণমূল নয় এই স্লোগান এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় বসকল রাজনীতিবিদদের মুখেই উঠে আসছে। এখানে শেষ হলেও কথা ছিল। এই স্লোগান এখন বিয়ে বাড়ির ডিজেতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলতে গেলে এই এক স্লোগান আসন্ন বিধানসভা উপলক্ষে গোটা পশ্চিমবঙ্গেই হইচই ফেলে দিয়েছে।

রাজনীতির মাঠ কি পাড়া-মহল্লা কিংবা বিয়ের আসর, পশ্চিমবঙ্গে সবার মুখে একটাই কথা খেলা হবে। এর শুরুটা হয়েছিল রাজ্যটির তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মন্ডলের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত স্লোগান খেলা হবের মধ্য দিয়ে। গত জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে। এই মাটিতেই খেলা হবে। সেই খেলার রেফারি হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত মন্ডলের এই হুঁশিয়ারির পরেই বীরভূম জুড়ে শুরু হয়ে যায় বাইক মিছিলে সবার গলায় শোনা গিয়েছিল খেলা হবে স্লোগান।

এরপর মুহূর্তেই নির্বাচনী আমেজ ভর করে পুরো পশ্চিমবঙ্গে। কেবল এই এক স্লোগানের মধ্য দিয়েই জমে ওঠে ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রচার-প্রচারণা। যদিও নির্বাচনের দিনক্ষণও এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে বিয়ের আসরে ডিজে পার্টিতে পর্যন্ত একে র‌্যাপ বানিয়ে দিব্যি নাচ করছে বর-কনে।

তবে চুপ করে নেই বিজেপিও। তৃণমূলের  খেলা হবের জবাবে দলটি বলছে, শুধু খেলা হবে না, গুলিও হবে। আবার খেলার মাঠে লড়াই চলবে, এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে বিজেপির যুব মোর্চার পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি শুভম নিয়োগী বলেন, খেলা হবে কথা তৃণমূলের নয়। বাংলাদেশের এক নেতা সংক্ষিপ্ত আকারে তা বলেছিলেন। সেটা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ব্যবহার করছে। ১০ বছর ধরে এ রাজ্যের তৃণমূল যে খেলা খেলেছে তা এবার বন্ধ হবে। এবার বাংলার বাসিন্দারা খেলবেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চুপচাপ বসে সেই খেলা দেখতে হবে। এরপর খেলা হবে স্লোগানের ব্যাখ্যাও দেন তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বিজেপির ১১ জনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সাদা শাড়ি, হাওয়াই চটি পরা মহিলা। মাঠ ওদের, রেফারি ওদের। কিন্তু গ্যালারিতে দর্শকরা হল বাঙলার জনগণ।

শামীম ওসমানের খেলা হবে স্লোগান গোটা পশ্চিমবঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাবে তা হয়তো কখনোই ভাবেনি এদেশের নেটিজেনরা। তাই বিধানসভাকে কেন্দ্র করে এই স্লোগান রীতিমতো দাবানল হয়ে গেল কীভাবে, এটা খুঁজতে গিয়ে ভারতের পত্রিকাগুলো খুঁজে পেয়েছে শামীম ওসমানকে। অবশ্য কেউ কেউ তো এখনও দাবি করছেন এটা অনুব্রত মন্ডলের। তবে অনুব্রত মন্ডল যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকেই এই স্লোগান আমদানি করেছেন তা ইন্টারনেট ঘাঁটলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩০০টি আসনের মধ্যে জিতে নেয় ২৯৪টিই। সে সময় বিজেপি পায় মাত্র ৩টি আসন। তবে, খেলা হবে কে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির খেলা যে জমে উঠেছে তা অনস্বীকার্য।

add-content

আরও খবর

পঠিত