আজ পবিত্র হজ : লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : পবিত্র হজ আজ। প্রাণঘাতী করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে সীমিত পরিসরে হতে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের এই বাৎসরিক ফরজ ইবাদত। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক পরিহিত আল্লাহর মেহমানরা আজ ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার সমবেত হবেন পবিত্র আরাফাতের ময়দানে।

আল্লাহর মেহমানরা আকুল হৃদয়ে ধ্বনিতে মহান রাব্বুল আলামিনকে বলবেন, লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ওয়াল মুলক। ( আমি হাজির ! হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সমস্ত প্রশংসা এবং নিয়ামত শুধু তোমারই, বিশ্বসমগ্র সাম্রাজ্যও শুধুই তোমার)

পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভই হজ পালনের প্রধান উদ্দেশ্য।

আজ জিলহজ বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর সৌদি আরবে বসবাসরত ১৬০টি দেশের প্রবাসী এবং সেখানকার স্থানীয় সহ মোট ১০ হাজারের মতো মুসলমান ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে দূরত্ব রেখে তাঁরা ইবাদত করবেন, হজের খুতবা শুনবেন এবং যোহর আসরের নামাজ পড়বেন। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা দেবেন ৯২ বছরের প্রবীণ শায়খ . আব্দুল্লাহ ইবনে সুলাইমান আলমানিয়া। খুতবা এবার বাংলায় অনুদিত হবে।

সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং গোটা রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন তাঁরা।

১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত।

জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাত যাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজিরা বড়ো, মধ্যম এবং ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। পরদিন ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। পরে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। মক্কায় পৌঁছার পর হাজিরা কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। একে বলে বিদায়ী তাওয়াফ। এরপর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন তাঁরা।

এর আগে ২৯ জুলাই বুধবার সারা দিন এবং রাতে হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করেন। তবে বছর তাঁবুতে কাউকে থাকতে দেয়া হয়নি। তাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনা টাওয়ারে রাখা হয়। সেখানেই শুরু হয় পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মহামারি করোনার কারণে এবারের হজ সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় আরামদায়ক হচ্ছে।

১০ হাজার হজ পালনকারীর প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই ধাপে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে তাঁদের। হজ পালনের জন্য যেসব স্থাপনায় হজ পালনকারীদের যেতে হয়, তার প্রত্যেকটিকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দিনে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হচ্ছে হাজিদের শরীরের তাপমাত্রা।

এবার হাজিরা ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদ নামক কালো পাথরে চুমু দিতে স্পর্শ করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে জমজম কূপের কাছে গিয়ে পানি পানেও থাকছে নিষেধাজ্ঞা। কেননা এই পানিতে ছড়িয়ে যেতে পারে করোনা ভাইরাস। আর সে কারণেই হাজিদের জন্য আলাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে করে জমজম কূপের পানি সরবরাহ করা হবে। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য এবার ৫০ জনের বেশি হাজি এক সঙ্গে শয়তানকে পাথর ছুঁড়তে পারবেন না।

করোনা মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে এবারের ব্যতিক্রমী হজে প্রতি ৫০ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে স্বাস্থ্য নেতা নিয়োগ করেছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই স্বাস্থ্য নেতা তাঁর দলের হজযাত্রীরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মানছেন কিনা, তা নিশ্চিত করবেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত