নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ সংবাদ দাতা) : অভিনব কায়দায় বিশেষ বাণিজ্যে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির শীর্ষ নেতারা। করোনাকালে ওষুধ বিক্রেতাদের এ সংগঠনটির ক্ষুদ্র ওষুধ বিক্রেতাদের পাশে থাকার কথা থাকলেও উল্টো তাদের উপর গজব হয়ে নেমে এসেছেন। জেলার প্রায় অর্ধশত বিক্রেতাদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে ওষুধের দোকান বন্ধ করে দিয়ে পুনরায় খুলে দেবার অনুমতি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা! সিভিল সার্জন, ড্রাগ সুপার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নাম করে ওইসব দোকানগুলো থেকে অবৈধভাবে এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সমিতির শীর্ষ নেতারা। তবে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির দাবি, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা, মানোর্ত্তীণ ওষুধ বিক্রি ও নানা অনিয়মের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ বানিজ্যের শিকার কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা জানান, রমজানের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন সমিতির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিনব অভিযানে নামেন। ঔষধের দোকানে লাইসেন্স না থাকার অভিযোগ এনে ওইসব দোকানে তালা মেরে দেন। দোকানের চাবি নিজের হেফাজতে নিয়ে নেন।
পরে তাদের সমিতির অফিসে দেখা করতে বলেন। দোকান খুলে দিতে হলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে হবে-এমন জুজুর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এমনকি লাখ টাকাও হাতিয়ে নেন। নগরীর আশপাশ, বন্দর, গোগনগর ও কাশীপুরে প্রায় অর্ধশত ঔষধ বিক্রেতা তাদের এমন চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশীপুর এলাকার এক ঔষধ বিক্রেতা জানান, রমজানে তার দোকানে তালা মেরে চাঁবি নিয়ে যান শাহজাহার খাঁন। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে চাঁবি ফেরত নিয়ে আসেন। ওই ঔষধ বিক্রেতার অভিযোগ, করোনা মহামারির সময় কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি পাশে থাকার কথা থাকলেও উল্টো তাদের উপর মরার উপর খরার ঘা হয়ে নেমে আসেন।
শুধু তাই নয়, করোনাকালে কম মুনাফায় ঔষধ বিক্রির অভিযোগে বন্দরের মেসার্স সালমা ফার্মেসীসহ কয়েকটি ফার্মেসীর উপর এ খড়গ নেমে আসে। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতা হাফিজুর রহমান খোকা ও নাজিমুদ্দিন গং বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীকে চাপ প্রয়োগ করে ওইসব দোকানগুলোতে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা ঔষধ বিক্রেতা মালিক সমিতি বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহাজাহান খাঁন ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা এ কাজে ঔষধ কোম্পানীর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের (আরএসএম) ব্যবহার করছে। টার্গেট করা দোকানগুলোর একটি তালিকা তারা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করতে চাপ দেয়। দাবিকৃত চাঁদা দেয়া হলে পরে ফিরতি মেসেজে ঔষধ সরবরাহ শুরু হয়।
বিষয়টি স্বীকার করে ঔষধ কোম্পানীগুলোর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের সংগঠনের নেতা সালাউদ্দিন আনসারী বলেন, বিষয়টি অন্যায়। তবে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতাদের চাপে এসব করতে হচ্ছে। যেসব ফার্মেসী তাদের কোম্পানীর ঔষধ বিক্রি করে তাদের সাথে এমন আচরণ অমানবিক বলেও মন্তব্য করেন। তবে এসব চাঁদাবাজিতে তাদেরও অংশ রয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে এসে আমার সাথে দেখা করুন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহাজাহান খাঁন বলেন, ঔষধ বিক্রেতাদের এসব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। লাইসেন্স ছাড়া অনেকে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তারা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক (ড্রাগ সুপার) ইকবাল হোসেন বলেন, প্রশাসন ও ভ্রাম্যমান আদালতের নামে তারা এসব করতে পারেন না। এটা অন্যায়। কারো লাইসেন্স না থাকলেও তারা দোকান বন্ধ করতে পারেন না। এটা প্রশাসনিক বিষয়। তবে তাদের সাংগঠনের চাঁদাবাজি তাদের সংগঠনের বিষয়। কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে অবগত করেনি। এখন অভিযোগ পেলাম তদন্ত করে দেখা হবে।