শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মেডিহোপের স্বাস্থ্য বটিকা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : শীতকাল আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে দিয়েছে । হিম হিম শীতল বাতাসের সাথে সাদা তুলোর মতো কুয়াশার চাদর ঢেকে নিচ্ছে চারপাশ থেকে । শীতকাল বাঙালীর কাছে একদিকে যেমন উপভোগ্য ঠিক তেমনি ভোগান্তিরও আরেক নাম এই শীতকাল। খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা সবকিছুতেই জীবনে স্বস্তি এনে দেয় শীত ঋতু। কিন্তু কখনও কখনও এর বিপরীতও দেখা যায়। প্রচণ্ড শীতে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হয়। সব বয়সের পাশাপাশি শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ।

ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতকালে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ্য হয়ে পরতে পরে। আর তাই শীতকালে শিশুর চাই বাড়তি যত্ন। শীতে শিশুকে উপযুক্ত আরামদায়ক ও কিছু বাড়তি গরম কাপড় গায়ে দিতে দিবেন। তার মাথা, ঘাড়, হাত এবং পা ভালো ভাবে গরম কাপড়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করুন । আর অবশ্যই শিশুদের জন্য কয়েক জোড়া শীতের কাপড় ব্যবহার করবেন এবং দুই থেকে তিন দিন অন্তর অন্তর তা পরিস্কার করে ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিবেন।

শীতে শুধু ঠাণ্ডা লাগার কারণেই যে বাচ্চা অসুস্থ হবে তা নয় বরং শীতকালীন অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। আর সেইসাথে থাকে প্রচুর ধুলোবালি যা শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করলে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশি সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া ধুলো, কুয়াশা শিশুদের নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুকে শীতকালে বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি ও সুষম খাদ্য খাইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করুন এতে শুধু শীতকালীন রোগ না বরং অন্য সকল রোগের ঝুঁকিও কমে যাবে। এই মৌসুমে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকতে শিশুদের দিন মৌসুমি ফল ও সবজি। মূল কথা বাচ্চার ভিটামিন প্রাকৃতিক ভাবেই পূরণ করুন। এছাড়া দৈনিক এক চামচ মধু খাওয়ান তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও সর্দি-কাশি কিংবা ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা কমে যাবে। শিশুদের ক্ষেত্রে শীত মৌসুম এলে অভ্যাসবসত ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান, আইসক্রিম খাওয়া বা রাতের বেলায় ফ্যান ছেড়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে টনসিল বা গলায় ব্যথা হয়। তাই তাদের এইসকল কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।

শীতকালেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করান। তবে দুপুর ১২ টার আগেই গোসলের পর্ব সেরে ফেলুন। গোসলের পর বাচ্চার মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে তারপর জামা কাপড় পরাবেন। ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই বেবি লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন নইলে শীতের রুক্ষ বাতাস ত্বকের ক্ষতি করবে।

শিশুদের জন্য পৃথক ও বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও ক্রমবর্ধমান প্রবীণদের চিকিৎসাসেবার পৃথক ব্যবস্থা দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে নেই। এ সময় অনেকেই প্রাণহানির শিকার হোন। এর বেশিরভাগ কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। ঠাণ্ডায় শরীরের কোষাভ্যন্তরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। কোষের স্থিতি বজায় রাখতে লবণের সঙ্গে পানি বের হয়ে যায়। ফলে কোষের মধ্যে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। বয়সের প্রভাবে রক্তনালি অধিকতর সরু হয়ে যাওয়ায় রক্তনালিতে রক্ত সহজেই জমাট বেঁধে যায়। দেখা দেয় স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক।

বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি কারণ শ্বাসনালির ইনফেকশন। শীতে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল ফ্লু থেকে দেখা দেয় নিউমোনিয়া। এ রোগের জটিলতায় প্রাণহানিও ঘটতে পারে। শীতে বয়স্কদের মাঝে শ্বাসনালির রোগ সিওপিডি ও অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায়। বেড়ে যেতে পারে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অসটিওআর্থ্রাইটিস ও যে কোনো জয়েন্ট পেইনের জটিলতা। ভাইরাস জ্বর ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন অনেকেই। বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় একটু ঠাণ্ডায় তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ভাইরাসের কারণে মুখে জ্বরঠোসা, ফাঙ্গাসের কারণে ত্বকে ডার্মাটাইটিস স্ক্যাবিস দেখা দিতে পারে।

এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বয়স্কদের স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। পরিমিত শীতবস্ত্র পরিধান করতে হবে। গরম কাপড়ে বুক, কান ও পা ঢেকে রাখতে হবে। একটি মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা কাপড় পরলে ঠাণ্ডা কম লাগবে। কাপড়ের স্তরে স্তরে বাতাস জমা হয়ে দেহ থেকে তাপ বাইরে বের হতে বাধা দেবে। গলা ও কানে কাপড় জড়িয়ে ঘুমাতে হবে। হাঁটার জন্য পার্কে বের হলে মোজাসহ আরামদায়ক জুতা-মাফলার পেঁচিয়ে প্রস্তুতি নিন। ঠাণ্ডায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। শীতের সময় কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন- ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করুন, হাত-পা নাড়াচড়া করুন। এতে করে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে। ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন। কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম চা, কফি খেতে পারেন। তবে যারা অযথা উদ্বিগ্ন থাকেন তাদের চা-কফি সেবন না করাই শ্রেয়। খাবার পর কুলি করতে হবে ভালো করে। বৃদ্ধ বয়সে দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে যাওয়ায় মুখে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়।

প্রতিদিন কিছু না কিছু টক জাতীয় ফল খান। বিভিন্ন অসুখ যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি, বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট পেইনের জন্য যারা আগে থেকেই ওষুধ খাচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতে পারেন। শীতের আগে ইনহেলার অনিয়মিত নিলেও এখন নিয়মিত নিতে হতে পারে। শীতের সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেমন- গাজর, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ও অন্যান্য সবজি। প্রতিদিন কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। এতে ত্বকের ইনফেকশন সহজে হবে না। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার যেমন_ ভ্যাসলিন, গ্গি্সারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করুন। ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে চাইলে পঁচা ও বাসি খাবার খাবেন না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনসহ প্রচুর পানীয় পান করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে ফলের রস এ সময়ে পান না করাই শ্রেয়। বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। নিয়ম মেনে চললে শীতের এই সময়েও বয়স্করা অনেকটা সুস্থ থাকতে পারবেন।

পরিবারের সকল সদস্যদের সহযোগিতা ও সচেতনতাই পারে শিশু ও প্রবীণদের জন্য সুস্থ্য সবল ও আরামদায়ক শীতকাল উপভোগ করার নিশ্চয়তা।

add-content

আরও খবর

পঠিত