নাারয়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সোনারগাঁ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়ী মজলীশ গ্রামে কথিত নারী কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়ার প্রতারণার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজের প্রতারনা প্রকাশের পর থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করেছে দুই ভুক্তভোগী।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উপজেলার বাড়ি মজলিস গ্রামের সিরাজ মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া ওহাব মিয়ার স্ত্রী কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়া আংটি পড়া ও তাবিজ-কবজের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন। এ নিয়ে রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজ স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে স্বর্ণের আংটি কেনার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সম্প্রতি, ভন্ড ও প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়ার কবিরাজির কথা জানতে পেরে একই বাড়ীর ভাড়াটিয়া আকলিমা আক্তার সরল মনে নিজের পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য যান এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি বাবদ তাকে তিনটি আংটির জন্য ২৪ হাজার টাকা দেন। ওই ভন্ড ও প্রতারক মহিলা কবিরাজ স্বর্ণের আংটির নামে আকলিমাকে ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি তিনটি আংটি প্রদান করে। ভন্ড ও প্রতারক কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়ার দেয়া আংটিতে আকলিমার কোন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় গত ১৯ জুন মঙ্গলবার বিকেলে আকলিমা নিজে বাদী হয়ে ভন্ড ও প্রতারক কবিরাজের নামে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরদিকে একই এলাকার জনৈক রাশিদা বেগম তার পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য গত পাঁচ মাস পূর্বে নিজ পরিবারের সমস্যা সমাধানের জন্য ভন্ড ও প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়ার কাছে যান। তিনিও আংটি ও তাবিজ-কবজ বাবদ দুইবারে ২৬ হাজার টাকা দেন। এতে তারও কোন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ও প্রতারিত হয়ে তিনি গত ২১ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজে বাদী হয়ে ভন্ড, প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজের বিরুদ্ধে থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
বাড়ি মজলিস গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজির নামে একজন ভূয়া, ভন্ড ও প্রতারক। তার দেয়া আংটিতে কোন প্রকার সমস্যার সমাধান হয় না। তিনি মানুষের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
পার্শ্ববর্তী বাড়িচিনিষ গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, ভন্ড ও প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজকে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। যে সমস্যার জন্য টাকা দিয়েছি আমাদের সেই সমস্যারও কোন সমাধান হয়নি। তাই টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের মামলাসহ হয়রানীর হুমকী প্রদান করে সে।
এদিকে ভূক্তভোগী আকলিমা বেগম জানান, আমাদের পারিবারিক সমস্যার সমাধানের জন্য নারী কবিরাজ সনিয়ার কাছে গেলে তিনি তিনটি আংটির জন্য আমার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন। তার কথামত ২৪ হাজার টাকা দেওয়ার পর তার দেয়া আংটিতে আমার সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। পরে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে উল্টো সে বিভিন্ন ধরনের হুমকী প্রদান করছে। অপর ভূক্তভোগী রাশিদা বেগমও একই অভিযোগ ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নারী কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সমস্যা সমাধানের জন্য টাকা নিয়েছি সত্য। সমস্যার সমাধান মূহুর্তের মধ্যেই হয় না। আস্তে আস্তে সমস্যার সমাধান হবে। তিনি নিজেকে সত্যিকারের একজন কবিরাজ বলেও দাবী করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সিরাজ মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া অভিযুক্ত ভন্ড ও প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজির নামে স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়াও দুর-দুরান্ত থেকে আগত বিভিন্ন লোকের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বাড়ীওয়ালা সিরাজ মিয়ার মেয়ে ইমা প্রায় ৫/৬ মাস পূর্বে ভূক্তভোগী আকলিমা বেগমের ঘর থেকে ৩,০০০/- টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রতারক রুবিনা আক্তার সনিয়া কবিরাজের শরনাপন্ন হলে সে করিবাজির মাধ্যমে বাড়ীওয়ালা সিরাজের মেয়ে ইমা টাকা চুরি করেছে বলে জানায়।
এদিকে থানায় দুইটি অভিযোগের ভিত্তিতে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহমেদ ঘটনার তদন্তে সরেজমিনে গেলে সকল সত্যতা জানতে পান এবং বাড়ীওয়ালা সিরাজ মিয়ার মেয়ে ইমার টাকা চুরির ঘটনাটিরও তিনি সত্যতা পান। এঘটনায় সিরাজ মিয়ার সাথে ভূক্তভোগী আকলিমা বেগমের দ্বন্ধ শুরু হয়। বাড়ীওয়ালা সিরাজ মিয়া ও প্রতারক কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়ার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। বলতে গেলেই তারা উভয়সহ স্থানীয় মাতব্বর টাইপের কতিপয় লোকের দ্বারা ভুক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানী করার এমনকি থানা পুলিশের ভয়-ভীতির হুমকী দিয়ে থাকেন।
তাই এলাকাবাসীর জোর দাবী, ভন্ড, প্রতারক ও কথিত কবিরাজ রুবিনা আক্তার সনিয়াসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অতি শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের জোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, রুবিনা আক্তার সনিয়া নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।