নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : নগরীর দুইনং রেলগেট এলাকায় আলমাছ পয়েন্ট ভবনে রাফিউল হক আনিস (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও ভবনটির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন হাসপাতালে আসা নিহত আনিসের এলাকার প্রতিবেশী ও স্থানীয় মেম্বার রফিকুল ইসলাম। তবে অবশেষে উভয় পক্ষের মধ্যে সুরাহ হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও ভবন মালিক আলমাস মিয়ার ছোট ভাই মিলন বিষয়টি সমাধানে বারবার লোক পাঠালে একপর্যায়ে মিলনের সহযোগী রাজুর কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল নিহতের আত্মীয় পরিচয় দেয়া কেরানীগঞ্জ থানাধীণ ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই মোকছেদুর রহমান। তবে রাজু সেটা প্রত্যাখান করে আরো কম করার কথা বললে রেগে যায় এটিএসআই মোকছেদুর। পাশিাপাশি ভবন মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তার সাথে সরাসরি কথা বলার বায়না ধরে। আর এ নিয়ে চলে রাতভর দর কষাকষি।
প্রতক্ষদর্শীদের কাছে জানা গেছে, রাতভর ওই মেম্বার আর পুলিশের তৎপরতা সন্দেহজনক ছিল। আর লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ দাবি করছিল। তা না হলে বিষয়টি সমাধান হবে না বলে হুমকী দিচ্ছিল। পরে সকালে ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে আনিসের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিহত রাফিউল রহমান আনিস এর স্থলে লাভলু নাম এন্ট্রি করে অপর মিস্ত্রী ইসমাইল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
নিহত আনিস, রংপুর জেলার গংগাচড়া থানার বেতগাড়ি ইউনিয়ন বাসিন্দা লতিফুল হক রঞ্জুর ছেলে। গত রবিবার (২ এপ্রিল ) সন্ধ্যায় আলমাছ পয়েন্টে কর্মরত ছিলেন আনিস। ভবনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি মালিকপক্ষের। এমন মৃত্যুর নেপথ্যে নানা সমালোচনার ঝড় উঠেছে নগরীতে।
প্রত্যক্ষদর্শী আলমাছ আলী পয়েন্টের কর্মরত অপর আরেক মিস্ত্রী জানান, মেইনলাইন বন্ধ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে জমিতে লুটিয়ে পরে আনিস। পরে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু বলে ঘোষনা করেন।
এবিষয়ে রংপুর জেলা গংগাচড়া থানাধীন বেতগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত রাফিউল রহমান আনিস আমার ওয়ার্ডের ছেলে। আমি খবর পেয়ে দ্রুত নারায়ণগঞ্জে আসি। থানা পুলিশ বলেছে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেওয়া যাবে না। কোন নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া একটি ভবনের ইলেকট্রিক কাজ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে আলমাছ আলী পয়েন্ট এর কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। এঘটনায় আমরা আইনি পদক্ষেপ নিব।
এ বিষয়ে কথা হলে রিপন নামে তার ছোট ভাই জানায়, আমি উত্তরায় থাকি। সেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি ডেন্টালের কাজ করি। কিভাবে মারা গেছে এখনো সঠিক জানিনা। লোকজনের মুখে শুনছি ইলেকট্রিক শক খেয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কেনা বক্তব্য দেয়নি এটিএসআই মোকসেদুর। তিনি বলেন, আমার আত্মীয় হয়। তাই মর্গে গেলাম। লাশ দেখলাম। আর ভবনের মালিকের খোঁজ খবর নিলাম। তবে আমি এ বিষযে কোন মন্তব্য দিবো না।
অন্যদিকে ভবন মালিকের ভাই মিলনের দাবী আনিস ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতো। কোথাও হয়তো সে কাজ করতে গিয়েই মারা গেছে। তবে কোথায়? সুইচ চেপে, না সংযোগ দিতে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে কিছুই বলতে পারেনি। তিনি বলেন, কন্ট্রাকটারদের মাধ্যমে ওরা আসে। এগুলি কন্ট্রাকটাররা বুঝবো।
তবে এ ঘটনাকে আড়াল করতে কত টাকা নির্দিষ্ট না বললেও তিনি জানান, পুলিশের মোকসেদুর বারবার টাকা দাবী করেছে। আমরা তাকে কেন দিবো। সাথে থাকা মেম্বারটা ভালো। কিন্তু পুলিশ পরিচয় দেয়া সে বলে। নিহত তার আত্মীয় যা বলার আমার সাথে বলেন। আমরা তখন বলেছিলাম পরিবারের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলান।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং কার কাছে হস্তান্তর করেছেন জানতে চাইলে এই মুর্হুতে ফাইল নাই বলতে পারছিনা সাফ জানান। কখন জানতে পারবো বললে তিনি বলেন, ফোনে এতো কথা বলা যাবে না। আপনি অফিসে আইসা সরাসরি কথা বইলেন।
নিহত আনিসের বিষযে তিনি জানান, আমি হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাই। পরে জানতে পেরেছি সে আলমাস পয়েন্টে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতো। আমি নিয়ম অনুযায়ী কন্সটেবলকে পাঠিযেছি। সে বুঝিয়ে দিয়েছে। নিহতের চাচাতো ভাইকে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তার নাম জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেন নি। তবে ময়না তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জানায়, নিহত আনিসের ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। কারো কোন অভিযোগ থাকলে নিয়ম অনুযায়ী আমারা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে ডোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাতে মোকসেদুর নামে পুলিশের এক লোক রাত প্রায় দেড়টার সময় মর্গে এসে লাশ দেখে। পরে আমাদের কে অনুরোধ করে। আর দ্রুত লাশের পোস্টমর্টেম করার জন্য বলেছে। এক পর্যায়ে লাশ টি ফ্রিজে রেখে দিতে বলে। তখন আমরা রিসিট করে নিয়ে আসতে বলি। পরে কাজ শেষ হয়ে গেলে দুপুরে পুলিশের লোকজন আসলে তারা লাশ নিয়া যায়।