নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : পর্যটন নগরী সোনারগাঁয়ে জামপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মিত পুরাতন আমবাগ ব্রিজটি অকেজো ঘোষণা করে নতুন ব্রিজ নির্মাণের লক্ষে ভেঙে ফেলা হয়। ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলার প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্মাণ কাজ শুরু না করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ৬০ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয়রা ক্ষুব্দ হয়ে বলছেন, সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালীপনায় আজ সচল ব্রিজকে অচল করে দিয়ে তারা উধাও হয়ে গেছে।
এলজিইডির বাস্তবায়নে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় টেন্ডার হয়। ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলায় ও ব্রিজটি নির্মাণে মের্সাস এস সরকার নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় উপজেলার আমবাগ, কাহেনা, বেলাব, পেরাব, ঐরাব, শিংলাব, ভরৎ, গজারিয়াপাড়া, হলদাবাড়ী, কান্দাপাড়া, তালতলা, মাসাবসহ উপজেলা শহরে আসতে ও বাংলার তাজমহল, পিরামিড খ্যাত বিনোদনকেন্দ্রে আসা পর্যটকসহ প্রায় ৬০ টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের ভাষ্য মতে, এই ব্রিজটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জামপুর ইউনিয়নের আমবাগ এলাকার বাজার সংলগ্ন আমবাগ ব্রিজটি নতুনভাবে নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে ভেঙ্গে ফেলার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। এমনকি ব্রিজ নির্মানের স্থলে বৈদ্যুতিক খুঁটি দুটিও অপসারন করা হয়নি। পুরোনো ব্রিজ ভেঙে ফেলার পর বিকল্প সড়কের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেও নামে মাত্র ইট বিছিয়ে সামান্য বালু-মাটি ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণের কাজ ফেলে রেখেছে। সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ উপজেলার সংযোগ ব্রিজ হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা পর্যটকসহ ২টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। ব্রিজ না হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা বাস, অটোরিকশা, টেম্পুসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলোর যাত্রীরা নেমে পেছনে ধাক্কা দিয়ে বিকল্প সড়ক ওই ব্রিজ এর পাশ ঘেঁষে ঢালু পথ থেকে উঁচু সড়কে গাড়ি উঠাতে সহায়তা করছেন। অপর দিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এদিকে সচল ব্রিজকে ভেঙ্গে অচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ।
এলজিইডির অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আমবাগ ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের উদ্দেশ্যে গত ২২ শে ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে এলজিইডি কর্তৃক ২ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দে মের্সাস এস সরকার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বুলবুল আহম্মেদ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায়। ব্রিজটি ভেঙ্গে দিয়ে তিনি নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ নিলেও বিভিন্ন অজু হাতে ব্রিজ নির্মাণের কাজ স্থগিত রাখেন।
এ বিষয়ে কোনাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ২০২২ সালে এইচএসসি, ভোকেশনাল পরীক্ষা চলমান। ব্রিজটি ভাঙ্গা ও বিকল্প রাস্তার নাজেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষক-পরীক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হউক।
সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলার তাজমহল ও পিরামিডের পরিচালক সিরাজউদৌল্লাহ উজ্জ্বল জানান, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বয়সী পর্যটক প্রতিদিন এই বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে এসে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলার এক বছর শেষ হলেও এখনো নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্রিজটি ভেঙ্গে রট বিক্রি করে ফেলেছে এবং রাতের আধারে বেকু নিয়ে এসে মাটি কেটে বিক্রি করে ফেলেছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকিও নেই। আমরা দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের দাবী জানাই।
স্থানীয় জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া জানান, ব্রিজটি না থাকায় এলাকাবাসীর ও জনসাধারণের অনেক সমস্যা হচ্ছে। একবছর আগে বুলবুল আহম্মেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণের কাজটি পেয়েছে বলে অবগত হই। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের নেতার সহযোগীরা সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে ব্রিজ ভেঙ্গে রট ও মাটি বিক্রি করে ফেলেছে। তারপর বছর খানেক পার হলেও কাজ শুরু করার খবর নেই। এই বিষয়ে আমি সম্প্রতি বদলী হওয়া ইউএনও’র সাথে আলোচনা করেছিলাম। সরকারের কাছে দাবি জনগণের কথা চিন্তা করে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করা হউক।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বুলবুল আহম্মেদ জানান, ব্রিজ ভাঙ্গার পর পাইলিং এর জন্য সাব-কন্ট্রাক্টর জলি কন্সট্রাকশনের কাছে দিলে তারা আমার ২ টন রডসহ প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। পাইলিং এর কাজ শেষ হয়েছে। খালের পানির জলাবদ্ধতা হওয়ার কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছিলো। শীঘ্রই নির্মাণ কাজটি শুরু করা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী আজরারুল হক জানান, দীর্ঘ দিন যাবত ঠিকাদারের তালবাহানায় নির্মান কাজটি বন্ধ আছে। ঠিকাদারের সাথে আমরা যোগাযোগ করে শীঘ্রই কাজটি শুরু করার জন্য তাগিদ দিয়েছি। তবে চলাচলে জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয় খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ান-উল-ইসলাম জানান, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তেমন ভাবে সব জায়গা চিনি না,তবে জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সে বিষয় সরেজমিনে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।