নারায়ণগঞ্জ বার্তা ৩৪ (বন্দর প্রতিনিধি) : বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ১৯৬২/৬৩ সালের রেলওয়ে কতৃক লীজ দেওয়া একওয়ার করে নেওয়া সম্পত্তি লিজের মাধ্যমে দখল নেওয়া কে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ বন্দর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে চরম উক্তেজনা বিরাজ করছে। ২৪সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুজন কর্মকর্তা ঘটনা স্হল পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াজউদ্দিন দিপ্তি বলেন, এই সম্পত্তিটি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। ৬২/৬৩ সালে রেলওয়ে জায়গাটি একোয়ার করে নেয়। নবীগঞ্জ মৌজার ৭২ দাগের আংশিক একোয়ার করেছে রেলওয়ে। একোয়ারের পর থেকে রেলওয়ে কিছু জায়গা কেটে নেয় এবং বাকি জায়গা আমাদের নিজস্ব থাকে, যেখানে আমরা বসবাস করি। এই দাগে জায়গা আছে সাড়ে ২২ শতাংশ, এর মধ্যে রেলওয়ে একোয়ার করেছে ১৪ শতাংশ। রেলওয়ে একোয়ারের পর থেকেই এই জায়গা আমাদের দখলে। এখানে আমরা একচালা দোকান করে বসবাস এবং ব্যবসা বাণিজ্য করি। কিছুদিন পূর্বে মুজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তি এই জায়গা লিজ আনছে বলে দাবি করেন। তখন আমি রেলওয়ে অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারি, ৮৬ সালে দেলোয়ার নামে এক লোক কুশিয়ারা মৌজার ৮নং দাগে জায়গা লিজ নিয়েছিল। এরপর দেলোয়ার এখান থেকে চলে যাওয়ার পর জানতে পারি দেলোয়ার মিয়া সেই লিজকৃত জায়গাটি মুজিবর মিয়ার নিকট হস্তান্তর করেছেন। তারা কুশিয়ারা মৌজার জায়গা লিজ নিয়ে এখন আমার নবীগঞ্জ মৌজার জায়গা দাবি করতেছে। আমাদের ঘর-দুয়ার ভেঙে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতেছে। বিষয়টি আমরা অফিসে জানিয়েছি। যেহেতু সেই জায়গাটি আমার সীমানার লাগোয়া এবং ভোগদখল করছি, তাই আমি জানার পরে গত তিনমাস পূর্বে রেলওয়ের কতর্ৃপক্ষের কাছে এই জায়গাটি ডোবা হিসেবে লিজ দাবি করি। যা এখন তদন্তাধীন আছে। এরমধ্যে সে পুলিশে চাকরি করে বিধায় এই জায়গা ছাড়ার জন্য সে আমাকে থানায়, এসপি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করায় এবং বিভিন্ন লোকজন নিয়ে হুমকি ধামকি করায়। এরমধ্যে রেলওয়ে থেকে দুইবার এখানে লোকজন এসেছে কিন্তু আমার সীমানা নির্ধারণ করে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি যে জায়গাটির জন্য লিজের দাবি জানিয়েছি সেই জায়গাটি আগে লিজ হয়নি। আমরা রেলওয়ের সম্পত্তিতে থাকি বিধায় কিছুদিন পূর্বে সে রেলওয়ে অফিসে আমাদের নামে নালিশ করেছে। তখন রেলওয়ে থেকে লোকজন এসে মাপজোক করে দেখেছে যে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তিতেই আছি। আমাদের বসবাসের জায়গার পরেও বেশকিছু জায়গা রয়ে গেছে। তারপরও সে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জমি লিজের মালিকানা দাবি করা মুজিবর রহমান জানান, এই জায়গাটি মূলত লিজ নিয়েছিলেন দেলোয়ার ও আব্দুল গণি। তারা এখন এই এলাকায়ই নেই। তারা যাওয়ার পূর্বে ৮০’র দশকে এই লিজটি হস্তান্তর প্রক্রিয়া আমরা গ্রহণ করি। সেই থেকে আজ অবধি এই বিষয় নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। আমি সেই থেকে নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করে যাচ্ছি। আমার যাবতীয় কাগজপত্র আছে। যেই জায়গার উপর সরকার আমার কাছ থেকে নিয়মিত খাজনা নিয়েছে, সেই জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও সরকারের। তিনি বলেন, তারা যে দাবি করছে নকশার সাথে তার মিল নেই। নকশাতো আমি বানাইনি। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের বলার কিছুই নাই, তার জবাব দিবে রেলওয়ে কতর্ৃপক্ষ। এখানে আমার একটিই দাবি, সরকার আমার কাছ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যে জায়গার খাজনা নিয়েছে আমাকে সেই জায়গা বুঝিয়ে দিবে। নকশা হিসেবে আমি জানি আমার বাড়ির সামনের জায়গাটাই সেই জায়গা। কিন্তু তারা সেই জায়গা এখন জোর দখল করে খাইতেছে। আমি এখানে জবর দখল করতে চাইনা, আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি, দশজনের সমঝোতাকেও শ্রদ্ধা করি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানও তাদেরকে ডাকিয়েছিল। কিন্তু তারা সেখানে যায়নি। তিনি বলেন, যখন রেলওয়ের লোকজন আমাকে এই জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছিল তখনতো তারা কোন বাধা দেয়নি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমি এই জমির লিজের দায়িত্ব নিয়েছি, এ পর্যন্ত তারা বাধা দেয়নি কেন, তারা কেন বললো না যে এই জায়গা আমাদের দিয়ে দেন, আমাদেরই লাগবে। এমনকি আমার যতটুকু মনে পড়ে যে সময় আমি এই জমি লিজের দায়িত্ব নেই সে সময় এই দিপ্তি মেম্বারও (ওয়াজউদ্দিন দিপ্তি) ছিল।
স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াজউদ্দিন দিপ্তির বোন জামাই জলিল সরদার এই বিষয়ে বলেন, আমি মনেকরি বাংলাদেশের সরকার বা রেলওয়ে কোম্পানীর উচিৎ যার বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠী এই সম্পত্তি ভোগ করেছে তাদেরকেই সম্পত্তিটি দেওয়া। আমি জমিরউদ্দিন মিয়ার মেঝো মেয়ের স্বামী হিসেবে নয়, আমি পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করছি যে, জমির আলী মিয়ার সম্পদটা যেন অন্য কারও হাতে না যায়, তাদের ছেলে সন্তানরাই যেন তার সম্পদটা ভোগ করে যেতে পারে। আমি আমার স্ত্রীর ভাইদের মুখে শুনেছি এটা সরকার একোয়ার করে নিয়েছিল। কিন্তু আজও পর্যন্ত এই জায়গা কেউ লিজ নেয়নি। তাই আমরা এর লিজ দাবি করছি।
এলাকাবাসী বলেন, রেলওয়ে কতৃপক্ষই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। তা না হলে এ জমি দখলকে কেন্দ্র করে ঘটতে পারে বড় ধরণের সংর্ঘষ।