নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক) : কখনো টোল ফি, কখনো হরতাল, কখনো করোনার অযুহাত, কিংবা তেলের দাম বৃদ্ধি। যে কোন অযুহাত পেলেই নারায়ণগঞ্জে বেড়ে যায় বাসের ভাড়া। এসব ভাড়া নিয়ে পরিবহন নেতাদের কখনো মানবিক হতে দেখা যায়নি। বরং অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধিতে পারদর্শিতা দেখিয়েছে তারা। এ নিয়ে প্রায়শই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রী সাধারণ।
মোস্তফা নামে একজন চাকুরীজীবীর সাথে কথা হলে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করেন তিনি। তাই তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। আনুমানিক ছয় বছর আগের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, হরতালের কারণে খুব অল্প বাসই চলাচল করছিল। তখন যাত্রী ছিল বেশী। তাই তাকে ৫টাকা বশী ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যেতে হয়েছিল। তাছাড়া করোনাকালে একটি আসন খালি থাকার কারণেও ভাড়া বেশী গুনতে হয়েছে। কিন্তু কখনই কোন পরিবহন মালিক মানবিকতা দেখান নি। নানা সময়ই ভাড়া বাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সে হিসেবে তো আর আমাদের বেতন বাড়ে না।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট রাতে জ্বালানী তেল বৃদ্ধি ঘোষনার পর থেকে পাল্টে যায় পুরো চিত্র। সে নির্দেশ অনুযায়ী দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ও কেরোসিনে ৩৪ টাকা, অকটেনেই সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি ৪৬ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা। এতে করে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপর থেকে বেড়ে যায় পরিবহনগুলোর ভাড়া।
এদিকে সরকারীভাবেও বাস ভাড়া নিয়ে চলে আসে নির্দেশনা। যেখানে দূর পাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ৪০ পয়সা বেড়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাস ভাড়া বাড়বে ২২ শতাংশ। আর সব মহানগরীতে ৩৫ পয়সা বেড়ে নতুন ভাড়া ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। তাতে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
তবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনের বাস ভাড়া টিকিট প্রতি ২০টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের ভাড়া ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা, শীতল পরিবহনের ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা, বিআরটিসি ৪০ টাকা থেকে ১০টাকা বাড়িয়ে ৫০টাকা ও হিমাচল পরিবহন ও আনন্দ পরিবহন ১০ টাকা বাড়িয়েছে। তবে বন্ধু পরিবহন নারায়ণগঞ্জ- চিটাগাং রোডে আগের ভাড়া ২৮টাকাই চলাচল করছে। এ নিয়ে পরিবহন মালিকদের দাবি, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই তারা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবার দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে আরো কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন। যদিও পরে যাত্রী সাধারণের ক্ষোভ ও প্রতিবাদে আরেক দফায় ৫ টাকা কমিয়ে দেয়ার নির্দেশনা আসে। তবে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি হলেও সে হিসেবে নির্ধারিত ভাড়া সাংঘর্ষিক বলেই জানায় সচেতন মহল।
মালিকদের পক্ষে বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান মো: জুয়েল হোসেন বলেন, সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেই অনুযায়ী ভাড়া বাড়িয়েছি। আগে ৪৫ টাকা করে টিকিট প্রতি ভাড়া নেয়া হতো। এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের হিসেব অনুযায়ী আমাদের ৬৭ টাকা আসে। সেখান থেকে আমরা ৬৫ টাকা করে নিচ্ছি। অর্থাৎ টিকিট প্রতি ২০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সিন্ডিকেট কিছু জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে অনৈতিক আর্থিক সম্পর্ক তৈরি করে বছরের পর বছর নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে ১৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে সানারপাড় হয়ে নারায়ণগঞ্জ আসতে এক কিলোমিটার বাড়ার কারণে ১৯ কিলোমিটার হয়েছে। গড়ে সাড়ে ১৮ কিলোমিটার। যদি ১৯ কিলোমিটার দূরত্বেও হিসাব করা হয় তবে বিআরটিএর নতুন নির্ধারিত হারে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বাস ভাড়া কোনোভাবেই ৪১ টাকা ৮০ পয়সার বেশি হবে না। বর্তমানে বাস মালিকরা যে হিসাব দেখায় তাদের মতেই ৫০টাকার বেশী ভাড়া হতেই পারেনা। তাহলে কেন বেশী টাকা নিবে। আমরা তা কোনভাবেই মেনে নিবো না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো: শামসুল কবির বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া নারায়ণগঞ্জে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখছি। একই সাথে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন মালিকদের নিয়ে আমরা বসেছি।