নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : রাত সাড়ে ১০টা। জ্বালানী তেল নিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় অসংখ্য মোটরযানের গ্রাহক। সাড়ি সাড়ি মোটর সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে চালকরা। তবে অঘোষিতভাবেই বন্ধ রাখা হয়েছে তেলের পাম্প। দিবাগত রাত ১২টার পরই বাড়তি টাকা আদায়ে এ কৌশল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ, এমন অভিযোগও তোলে গ্রাহকরা। গত ৫ আগস্ট শুক্রবার রাতে এমন চিত্র দেখা গেছে পঞ্চবটি এলাকার মোজাফফর আলী এন্ড সন্স সহ শহরের জ্বালানী তেল বিক্রয় কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ফিলিং স্টেশন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নারায়ণগঞ্জে রাত থেকেই হট্টোগোল শুরু হয় পাস্প গুলোতে। তেল মজুদ থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা দেয়া হয়নি কোন জ্বালানি তেল। ১২টা থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও রাত ১০টা থেকে পাল্টে যায় পাম্পগুলোর চিত্র, এতে ক্ষুব্দ গ্রাহকরা।
ফতুল্লা পোস্ট অফিস এলাকা থেকে আসা মো. জহির নামে একজন মোটর সাইকেল আরোহী বলেন, আমার মোটর সাইকেলে তেল নেই। তাই গাড়ি ধাক্কিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। এর মধ্যে তেল দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলো পাম্পের কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ১২টার পরে তেল দেয়া হবে। তাও নতুন নির্ধারিত মূল্যে ১৩৫ টাকা দরে। সেটাতে রাজি হয়ে বললাম তারপরেও যেন তেলটা এখনই দেয়া হয়। দূর থেকে এসেছি। রাত ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। এতো র্দীঘ সময় থাকা কষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রকম ঘোষণা ছাড়া পাম্প বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। কারো কোন কথা চলবে না। রাত ১২ টার পরই নতুন নির্ধারিত দামে তেল দিবে। এ কেমন জুলুম।
আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, যেভাবে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনি বাড়লে মানুষ না অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশেষ করে পরিবহনে সব কিছু বেড়ে যাবে। বাসের টিকিট থেকে শুরু করে, নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোন পণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে সাধারণ মানুষের।
তাছাড়া এদিকে কথা হয় আরেকজন ভুক্তভোগী গ্রাহকের সাথে। পেশায় তিনি ট্রাক চালক। যাবেন নোয়াখালী লক্ষিপুর। তবে সেখানে যাবার মত পর্যাপ্ত ডিজেল সংরক্ষিত নেই ট্রাকটির ট্যাংকিতে। এতে করে তাকেও মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ইন্টার ডিস্ট্রিক গাড়ি চালাই। এখন এই ট্রাক মালে লোড করা নিয়া যামু নোয়াখালী লক্ষিপুর। যেতে আমার তেল লাগবে ১৬০ থেকে ৭০ লিটার। কিন্তু আছে ২ ইঞ্চি, অর্থাৎ ৩০ লিটারের মত। তেল নিতে এই পাম্পে আসছি শুনি ডিজেলে দাম বেশী দিতে হবে। এখন ১১৪ টাকা দিয়ো যদি তেল নেই। আমার কি পুষবো ? আগে জানলে তো ভাড়াটা বেশী নিতাম।
এদিকে পঞ্চবটি মোজাফফর আলী এন্ড সন্স পাম্পের মিটারে প্রতি লিটার ৮৯ টাকা দৃশ্যমান হলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৩৫ টাকা করে নতুন দামে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। কোথাও কোথাও রাত ১০টা পর্যন্ত ১০০ টাকায় দেয়া হয়েছে। তবে ২ লিটারে সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, মজুদকৃত তেল নিয়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে হণন করা হচ্ছে ভোক্তার অধিকার। তবে দেখার যেন কেউ নেই।
এ নিয়ে মো. শহীদ নামে একজন গ্রাহক বলেন, গতকালই তেল মজুদ করে রাখা হয়েছে। যেহেতু শুক্রবার ঘোষণা এলো। আজ তো নেয়নি। পুরনো দামে কিনেও ১২ টা বাজার আগেই কেন তেল দেয়া হচ্ছে না ? এটা তো গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। এতে এতো মানুষকে দাড়িয়ে রেখে জিম্মি করে ফেলেছে। তারা বলছে নতুন দরে দিবে ১২ টার পরে। সাড়ে ১২টায় আমি তেল নিলাম। এটা কেমন কথা। কালক্ষেপন করে মজুদ তেল নিয়ে ভোক্তা অধিকার হণন করা হচ্ছে কেউ কি দেখার নেই। তাহলে কি করছে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার ? দাম বাড়িয়েছে, ঠিক আছে। কিন্তু তারা নির্দেশনাটা কি মানলো। তাদের ইচ্ছাই তো সব হচ্ছে। ভোক্তাদের ঠকিয়ে এক রাতেই তারা বাজিমাৎ করে নিয়েছে। ১২ টার আগে সময় টুকু তারা ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে নিরবে লক্ষ লক্ষ টাকা অধিক হাতিয়ে নিলো। এ প্রতারক ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিবে কে ?
এ বিষয়ে জানতে কথা হলে পাম্পে থাকা ক্যাশিয়ার জানালেন নিরুপায়ের কথা। তিনি বলেন, সরকার বাড়িয়েছে আমাদের কি করার। কিন্তু ১২ টার আগেই কেন পাম্প থেকে তেল দেয়া বন্ধ করা হলো এ প্রশ্নে বলেন, আমাদের একটু সমস্যা ছিলো। তবে দেখা গেছে অনেকেই গেলন কিংবা চোঙ্গায় তেল দেবার জন্য বললেও তা দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নারায়ণগঞ্জের পরিচালক মো. সেলিমুজ্জমান বলেন, কেউ যদি ভোক্তাদের সাথে কোনরকম প্রতারণা করে সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সে ব্যবস্থা নিবে।
উল্লেখ্য, ঘোষণা অনুযায়ী দাম বেড়েছে প্রতি লিটার ডিজেলে ও কেরোসিনে ৩৪ টাকা, অকটেনেই সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি ৪৬ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা। এতে করে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।