‌শেষতক ৩৪ জ‌নের প্রাণনাশকারী জাহাজ মুক্ত, জা‌মিনে ১৪ জন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মারা গিয়েছিল ৩৪ জন। ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৪ আসামিই পেয়ে গেছেন জামিন। কোটি ৮৫ লাখ টাকা বন্ডের বিনিময়ে এসকেএল নামের জাহাজটি ফিরে পেয়েছেন মালিক। অথচ এর কিছুই জানেনা মামলার বাদী পক্ষ। ২০ই মে বৃহস্পতিবার ২৩ই মে রবিবার পৃথক দুটি আদালত আসামিদের জামিন জাহাজটিকে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, গত বুধবার জেলা দায়রা জজ আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্ত জাহাজ মালিকপক্ষ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নিহত ৩০ জনের পরিবারকে জনপ্রতি লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। বাকি জনের পরিবারের লোকজন ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হননি। তবে সবাই ঘটনায় কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই বলে লিখিত দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আদালত আসামিদের জামিন আদেশ দেন।

বিষয়ে আদালত পুলিশের ইনস্পেকটর মো. আসাদুজ্জামান জানান, রবিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আদালত কোটি ৮৫ লাখ টাকা বন্ডে জাহাজটিকে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন।

তবে মামলার বাদী বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য আসামিদের জামিন জাহাজ জিম্মায় দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ২৪ই মে সোমবার সকালে বন্দর ঘাট থেকে জাহাজটি নিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। জাহাজের জিম্মা কিংবা ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে কিছুই জানি না।

এদিকে আসামিদের জামিন জাহাজটি মালিকের জিম্মায় চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডুবে যাওয়া লঞ্চের কেরানি মঞ্জুরুল ইসলাম। ঘটনার দিন ওই লঞ্চেই ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, সদরবন্দরনৌ থানায় ঘুরছি। কেউ মামলা নেয় নাই। সর্বশেষ মেরিন কোর্টে মামলা করতে গেলাম। আবেদন রাখা হইছিল। এখনো মামলা হয় নাই।

এমন ঘটনা নদীপথকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা লঞ্ চমালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, আমাদের মামলা নেওয়া হয়নি। তখনই বুঝেছিলাম, বিআইডব্লিউটিএর করা মামলা চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাদের যোগসাজশেই আসামিদের জামিন হয়েছে। এই ঘটনা নদীতে কার্গো বাল্কহেডচালকদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে এবং আরও লঞ্চ ডুবির জন্য সহায়ক হবে।

লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নিহত দুই বোন সাদিয়া আক্তার (১১) লতা আক্তারের (১৯) বাবা কলা বিক্রেতা দুখু মিয়া বলেছেন, অভিযোগ নেই মর্মে তিনি কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেননি। একজন অপরিচিত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে তাঁকে নারায়ণগঞ্জে ডেকে এনে জনপ্রতি লাখ টাকা দেন এবং ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন স্বীকারোক্তি হিসেবে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। সাক্ষরজ্ঞান না থাকায় তিনি টিপসই দিয়ে সেখান থেকে চলে যান। তবে তাতে কী লেখা ছিল, সে বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। একই কথা বলেছেন আরেক স্বজন মো. মিঠু।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিল সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জগামী এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এসকেএল (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০১২৬৪৩) নামের একটি কার্গো জাহাজ। ঘটনায় ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাগেরহাট আসনের সাংসদ শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের মালিকানাধীন জাহাজটি চলাচলের অনুমতি ছাড়াই চলছিল বলে ঘটনায় গঠিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি জানিয়েছিল। অনুমোদনহীন জাহাজটির বেপরোয়া গতি সংকীর্ণ নৌপথকে লঞ্চডুবির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল তদন্ত কমিটি।

এত বড় প্রাণহানির ঘটনায় টানা এক সপ্তাহ চেষ্টার পরেও লঞ্চমালিকপক্ষ নারায়ণগঞ্জের কোনো থানায় মামলা করতে পারেনি। পরবর্তীকালে মেরিন আদালতও তাঁদের মামলা নেয়নি বলে লঞ্চের মালিক প্রথম আলোকে অভিযোগ করেছিলেন। পরে বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে ১৪ জন স্টাফসহ জাহাজটিকে আটক করে কোস্টগার্ড। পরে বাবু লাল বৈদ্যের করা মামলায় জাহাজটিকে জব্দ এবং স্টাফদের গ্রেপ্তার দেখায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানাপুলিশ।

add-content

আরও খবর

পঠিত