নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ঢাকা ডেস্ক ) : আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সকাল ১০টা ১২ মিনিটের দিকে এই সম্মেলন শুরু হয়। এর আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ধারাকে সমুন্নত রেখে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেট অংশ নেন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে সম্মেলনে।
অহরাহ্নে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুপুরের খাবারের পর অহরাহ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ প্রত্যেক জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকরা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনে শুধু কাউন্সিলররা উপস্থিত থাকবেন। প্রথমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। এরপর ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সংযোজন-বিয়োজন হবে। দলের তৃণমূলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এরপর বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মতা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মসিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রথমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আহ্বান করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে শীর্ষ দুই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এরপর কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে কোনো পদে একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোট হবে এবং ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী একাধিক নেতা জানান, সাধারণত কাউন্সিলররা নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় এবং কাউন্সিলররা তা একবাক্যে সমর্থন করেন। সভাপতির ওপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন কাউন্সিলররা। এবারও একই পদ্ধতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এবার মূল আলোচনায় রয়েছে কে হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক? সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন এ নিয়ে দলের ভিতরে কৌতূহলের অন্ত নেই।
বর্ণিল সাজে সেজেছে রাজধানী এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক বর্ণিল সাজে সেজেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, সম্মেলন স্থলে চোখ ধাঁধাঁনো আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারসহ অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে উদ্যানটি। নজরকাড়া সাজসজ্জা আর ব্যাপক উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্মেলন সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা আকৃতির বিরাট মঞ্চ। সাজানো হয়েছে চারপাশ তথা পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা। আলোকসজ্জার পাশাপাশি গাছগুলোতে করা হয়েছে সাদা-লাল রং। মঞ্চে যাওয়ার রাস্তাগুলোয় আলোকসজ্জার পাশাপাশি সম্মেলনের পোস্টার-ব্যানার দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার উল্লেখযোগ্য সড়ক, স্থান ও স্থাপনা সাজানো হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সন্ধ্যা হলেই লাল-নীল আলোয় রঙিন হয়ে উঠছে শহর-বন্দর-রাজপথ। একইভাবে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন এবং তার সরকারি কার্যালয়সহ রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোও সম্মেলন উপলক্ষে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রংবেরঙের কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো সম্মেলনস্থল। মঞ্চের দুপাশে রাখা হয়েছে দলীয় সাবেক নেতাদের প্রতিকৃতি। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্মেলনস্থলে উপস্থাপন করা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র। সম্মেলন উপলে দলটির সব জেলা কার্যালয়ও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশন এবং প্রথম দিন সন্ধ্যায় থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরই মধ্যে থিম সং গাওয়ানো হয়েছে জনপ্রিয় গায়ক বাপ্পা মজুমদারকে দিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি তা পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া থাকবে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজ নিজ সংস্কৃতির গান ও নাচ।