নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : ইউটিউবে ভিডিও দেখছিল আলভীনা ইসলাম। হঠাৎই একটি ভিডিওতে চোখ আটকে যায় তার। সে দেখতে পায়, তার মা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে। তখন সে বুঝতে পারে তার মায়ের কোনো একটি সমস্যা হয়েছে। ঘটনা ১৭ই মে রাতের। ওই ভিডিও দেখার আগ পর্যন্ত রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা আলভীনাকে জানায়নি কেউ।
এরপরই ঘটনা খুলে বলতে বাধ্য হন আলভীনার বাবা মনিরুল ইসলাম মিঠু। তারপর থেকে আলভীনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত। সারারাত ঘুমাত না। সকালের দিকে ঘুমাত। মাকে খুঁজত। মাকে এক নজর দেখার জন্য ছটফট করত। কিন্তু মাকে একটিবার দেখার কোনো সুযোগ হয়নি আলভীনার। কারণ, রোজিনা ইসলাম ছিলেন গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গত ১৭ই মে দুপুর ঠিক দেড়টার দিকে সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে দেখা হয় আলভীনার। সেই সময়ের ১৫০ ঘণ্টা পর ২৩ই মে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাকে হাসপাতালের শয্যায় প্রথম দেখে আলভীনা। আলভীনা যখন হাসপাতালে প্রবেশ করে, তখন চিকিৎসক রোজিনার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। বেশ কিছু সময় পর চিকিৎসক চলে যান।
চিকিৎসক চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলভীনা তার মায়ের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। বসেই মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই রোজিনা ইসলাম তাঁর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেন। দীর্ঘ ৬ দিন পর মা-সন্তানের প্রথম স্পর্শ ! অথচ তাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল ১৭ মে রাতেই। কথা ছিল একই টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া সেরে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার।
যদিও আলভীনা বেশিক্ষণ তার মা রোজিনার কাছে থাকতে পারেনি। সব মিলিয়ে ৫০ মিনিট পেয়েছে সে। সেই ১৭ মে দুপুর দেড়টার দিকে শেষবার দেখেছিল মাকে। আর আজ দেখল। দেখার পর চোখ ভিজে এসেছিল আলভীনার। এখন সে বাসায় চলে গেছে। রবিবারই রোজিনা ইসলামের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। রিপোর্ট আসার আগেই আলভীনাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে রোজিনার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে।
আলভীনা বাসায় চলে যাওয়ার পর রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে কথা হয়। সে সময় কথা প্রসঙ্গে মিঠু বলছিলেন, আমাদের একমাত্র মেয়ে আলভীনা ইসলাম খুব কেঁদেছে এক সপ্তাহ ধরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। মাকে ছাড়া সে কখনও ঘুমায়নি। এ ঘটনার পর মাকে ছাড়া সারারাত জেগে থাকত। কাঁদত। আমি ওকে বোঝাতাম, তোমার মা (রোজিনা) একটি ভালো কাজ করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছে। দুই-চার দিনের মধ্যেই ফিরে আসবে। এই কথা বলা ছাড়া আর কিছু বলার ছিল না। তারপরও মেয়ে কাঁদত। কষ্টে বুকটা ফেটে যেত আমার। মা আর বাবা ছাড়া আলভীনা কিছুই বোঝে না।
মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, মেয়ে বাসায় চলে গেছে। রোজিনার কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে করোনার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তার আগেই আলভীনা বাসায় চলে গেছে। স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে রোজিনাকে। আগামী কয়েকদিন এখানেই থাকতে হবে তাকে। আগে থেকেই তার কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। সেজন্য চিকিৎসা করাতে হবে। তার হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আশা করছি সুস্থ হয়ে রোজিনা বাসায় ফিরবে। নতুন উদ্যমে শুরু করবে সাংবাদিকতা।
সুত্র : এনটিভিবিডি ডট কম।