হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল, দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন সাকিব

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : শারীরিক মানসিকভাবে আনফিট জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাননি সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর কেন্দ্র করে আগে ঘটেছে অনেক ঘটনাই। এর সর্বশেষটা ছিল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিশ্রাম দেয়া। কিন্তু শনিবার পাল্টেছে সেই সিদ্ধান্তও বিসিবিতে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সাকিব নিজে এবং সভাপতি পাপন জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন সাকিব। তিনি সেখানে ওয়ানডে টেস্ট উভয় সিরিজে এবং আগামীতে সব ফরমেটে সবসময় খেলতে প্রস্তুত। তবে পাপন যেমনটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তাতে এই সফরে সব ম্যাচ নাও খেলতে পারেন সাকিব। কারণ সাকিবের মানসিক পরিস্থিতি মোতাবেক তাকে বিশ্রাম দেয়া এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনমতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সাকিবও জানিয়েছেন, বিশ্রাম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি। ১৩ই মার্চ রবিবার রাতেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হবেন।

বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে দিলেন, আগামীকাল ( ১৩ই মার্চ রবিবার) রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরবেন সাকিব। দুবাই থেকে দেশে ফেরার পর পাপনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতেই মূলত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, যা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান আজ।

শনিবার দুপুর ১টার কাছাকাছি বিসিবি ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, শীর্ষ পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক, ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান।

বৈঠক শেষে সাকিব বলেন, পাপন ভাইর সঙ্গে পরশু রাতেও কথা হয়েছে, আজও উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু তিন ফরম্যাটেই আছি, তিন ফরম্যাটেই সবসময় এভেইলেবল থাকবো। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কখন বিশ্রাম দেওয়া দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও আমি এভেইলেবল।

কিন্তু তিনি নিজে এভেইলেবল থাকলেও, তাকে কি দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা যাবে ? কেননা সাকিবকে তো প্রায় দুই মাসের বিশ্রাম দিয়েছে বিসিবি। এখন সেই বিশ্রামের সিদ্ধান্ত বদলে দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন সাকিব ? গেলে কবে ? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পাপন।

তার ভাষ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সব ম্যাচেই এভেইলেবল সাকিব। আগামীকাল (রবিবার) রাতে সে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এখানে কথা আছে, এমনও হতে পারে সেখানে কোনো ম্যাচে ওকে (বিশ্রাম দিয়ে) দলের বাইরেও রাখা হতে পারে। এটা নিয়ে হুলস্থুল করার কিছু নেই।

জাতীয় দলের হয়ে যারা নিয়মিতই খেলেন তাদের নিয়ে পুরো বছরের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি করা হয়ে থাকে। এজন্য মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পান ক্রিকেটাররা খেলা থাকুক বা না থাকুক। আর তাই যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন সিরিজে ইনজুরি ব্যতীত বারবার খেলতে অনীহা জানান কোন ক্রিকেটার তখন দলের প্রতি তার নিবেদন নিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন পড়ে যায়। বিষয়টা সাকিব অতীতে অনেকবারই করেছেন। আসলে তিনি এমনটা সেই ২০১৭ সাল থেকেই শুরু করেছেন। সেবারও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ খেলেননি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। তারপর টানা সাড়ে বছরে সবমিলিয়ে বাংলাদেশের খেলা ২৭ টেস্টের মাত্র ৮টি খেলেছেন সাকিব। যদিও আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় মাঝের বছরে টেস্ট খেলার কোন সুযোগই ছিল না। তবে দেশের খেলা সর্বশেষ টেস্টের ৬টি না খেলাটা নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেটা তীব্র হয়েছে গত বছর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্টের সিরিজ না খেলে আইপিএল খেলতে যাওয়ায়। বছর নিউজিল্যান্ড সফরেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে টেস্ট খেলেননি। আবারও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। সেই বিতর্ক এবার সীমা ছাড়িয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও সাকিব খেলতে না চাওয়ায়। পাপন তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, বেতন নিয়ে খেলবে না কেন এবং আইপিএলে দল পেলে কি সাকিব বলত মানসিকভাবে আনফিট? টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন তো জানিয়েই দেন, এসব ঘটনার একটা ফুলস্টপ দেয়ার সময় হয়েছে এবং বোর্ডই আসলে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রাখে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারকে নিয়ে।

সাকিবকে নিয়ে চারদিকে যখন গরম হাওয়া এবং পাপন নিজেও তীব্র প্রতিক্রিয়া করেছেন তখন ঠিকই সাকিব ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিসিবির কাছ থেকে চাওয়া অনুসারে বিশ্রাম পেয়েছেন। তবে রবিবার সাকিবের সঙ্গে আলোচনার পর পাপন উল্টো নরম সুরে সাকিবসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের পক্ষেই কথা বলেছেন। সাকিব পুরনো সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন, তিনি খেলবেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই সিরিজই। আজ রাতে রওনাও হবেন। তার বিষয়ে পাপন বলেন, পরশু এসে আমাকে যে জিনিসটা বলেছে একটু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মানুষের জীবনে অনেককিছুই ঘটে। প্রত্যেকেরই এমন কিছু আছে যা কেউ জানে না। সে মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা তাকে সময় দিয়েছি ভাববার। যেহেতু সিদ্ধান্ত নিতে কোন একটা কারণে সমস্যা হচ্ছে তার, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছে বা চিন্তিত, সেই জিনিসটা দূর করার জন্য তার পাশে থাকা উচিত। দিন আগেও মানসিক শারীরিকভাবে যার সমস্যা ছিল, তিনি এখন কিভাবে খেলবেন ?

সাকিব নিজে বিষয়ে বললেন, এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি, যেহেতু আমার সামনে পুরো পরিষ্কার চিত্র আছে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গেলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। অনেক সময় হয়, আপনি যদি আলাদা কোন পরিবেশে যান, মানসিক অবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। তো আশা করি, সে রকম কিছু হবে ভালভাবে এবং দলের জন্য দারুণ পারফর্ম করতে পারব।তবে এই সফরে সব ম্যাচই খেলবেন সাকিব এমনটা নাও হতে পারে। পাপন তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোন একটায় যদি না খেলে, এমন হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে ওই ম্যাচে ড্রপ করেছে। এমন হতে পারে একটা ম্যাচ বিশ্রাম চেয়েছে। এটা নিয়ে এত হুলুস্থুল করার কিছু নাই। মোদ্দা কথা, আমাদের পুরো প্রোগ্রাম দেখে বলেছে, খেলতে চায় এবং সে খেলবে তিন ফরমেটেই।

এমনকি সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রয়োজন মতো এখন বিরতি দেয়াটাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন পাপন। কারণ সাকিব, তামিম, মুশফিকুর রহিম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটানা খেলছেন। আর এখন বছর করোনা মহামারীর পর ক্রিকেট সূচীতে দারুণ চাপ পড়েছে। টানা আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার পাশাপাশি আছে ঘরোয়া ক্রিকেটও। তাই সিনিয়রদের নিয়ে পাপন বললেন, সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর কিন্তু অনেক চাপ। আমাদের বছর ১৪টা ওয়ানডে, ১৫টা টি২০, ৮টা টেস্ট আছে। টানা এত খেলা তাদের জন্য আসলেই অসুবিধার। যদি কেউ কোন ফরমেট খেলতে না চায়, তাহলে আগে আগে বলে দেবে। কিন্তু সিরিজের আগমুহূর্তে বললে আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা। এটা আমাদের বুঝতে হবে। এটা বুঝেই আমি বিশ্রাম নেয়ার কথা বলেছিলাম। অনেকে মনে করে আমি রাগ করে বলেছি। রাগ করার কিছু নেই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আসলেই খেলোয়াড়দের মাঝেমাঝে বিরতি দরকার।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। পরের দুই ম্যাচ যথাক্রমে ২০ ২৩ মার্চ। ৩১ মার্চ থেকে ডারবানে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু এপ্রিল থেকে। এক মাসের সফর শেষে ১৩ এপ্রিল টাইগারদের দেশে ফেরার কথা।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াড
তামিম ইকবাল খান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলী, মাহমুদুল হাসান জয় সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াড
মুমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল খান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, ইয়াসির আলি রাব্বি, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি, শরীফুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, সাদমান ইসলাম কাজী নুরুল হাসান সোহান।

add-content

আরও খবর

পঠিত