নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালাতে গিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদ সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুরের দুধঘাটা গ্রামের মুদি দোকানি পিয়ার জাহান সরদারের ছেলে। মাদ্রাসা থেকে মাত্র দাখিল পাস করা পলাশ গত তিন বছরে ৪০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে বেশি গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। তার এই বারবার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।
ইমিগ্রেশন পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, পলাশের পরিচয় উদ্ধার করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আর তা হলো-গত তিন বছরে পলাশ ৪০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। শুধু গত বছরই তিনি দুবাই যান চারবার। আর প্রত্যেকবার দুইদিনের বেশি সেখানে থাকেননি। ওই বছরই পলাশ মালয়েশিয়া ও ভারতেও তিনবার করে যাতায়াত করেন। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুবাই গিয়ে মাত্র দুই দিন পর ২৮ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন ওই যুবক।
সূত্রগুলো আরো বলছে, এর আগে গত বছরের ১১ মে, ২ জুন, ১৯ আগস্ট তিন দফা তিনি দুবাই যান।
সোমবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, পলাশের আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি পরীক্ষা করে আমাদের ডাটাবেজে থাকা এক অপরাধীর সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। সেই অনুযায়ী নিহতের বিমানের টিকিট ও পাসপোর্টের তথ্যে সব মিল পাওয়া গেছে।
এর আগে রবিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ। তার মৃত্যুর পর নানা বিষয় নিয়ে রহস্যে পড়ে গেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সেগুলো উদঘাটনের অংশ হিসেবেই তার পাসপোর্টের বিষয়টি সামনে চলে আসে। আর পাসপোর্টের খবর জানতে গিয়েই বেরিয়ে আসে এত বেশি বার বিদেশ ভ্রমণের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, পলাশের আঙুলের ছাপ তাদের ডাটাবেজে থাকা এক অপরাধীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান জানান, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ ২০১২ সালে এক নারীকে অপহরণ করে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তখন তাকে এক সহযোগীসহ আটক করে র্যাব-১১। একই সঙ্গে সেই নারীকেও উদ্ধার করা হয়। র্যাবের ডাটাবেজ অনুযায়ী ২০১২ সালে তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দাখিল পাস। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পলাশ আহমেদের পাসপোর্ট নম্বর বিএন ০৯৫০৮৮২। এই পাসপোর্টের সূত্র ধরেই তার বিদেশ যাতায়াতের তথ্য বেরিয়ে আসে। গত তিন বছরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুরসহ অন্তত ৪০টি দেশে গিয়েছেন। তবে পলাশ সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেছেন দুবাই। কেন তিনি বারবার দুবাই যেতেন তা এখন খতিয়ে দেখছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে পলাশ আহমেদের দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। সোমবার সিমলা বলেছেন, চার মাস আগেই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। কিন্তু সিমলার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোট হন পলাশ। এছাড়া নিজ এলাকায় পলাশের আদমব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। অনেককে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণার পাশাপাশি কোনও মাফিয়া চক্রের সঙ্গে তার জড়িত থাকার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় একটি সূত্র।
তদন্তের পরই বেরিয়ে আসবে পলাশ কোনও বিদেশি শক্তির ইন্ধনে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সকে বিতর্কিত করতে চেয়েছেন, নাকি কোনও মাফিয়া চক্রকে নিরাপত্তা চক্রের দৃষ্টির আড়াল করতে চেয়েছিলেন, নাকি সত্যিই কোনও মানসিক রোগী ছিলেন।