নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ২০০৭ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমিই প্রথম কর মওকুফ করেছিলাম। তৎকালীন সময়ে দেশের কোথাও এটা করা হয় নাই। এমনকি মন্ত্রনালয় থেকেও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নাই। কিন্তু আমি যখন করলাম, তখন এমন কথাও শুনেছি আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে, আমাকে জেলে যেতে হবে, কেন আমি আইনের বাইরে গিয়ে এই কাজ করলাম। কোন নির্দেশনা নাই তারপরও কেন করলাম। আমি সেই দিন জবাব দিয়েছিলাম। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে যদি কর মওকুফ করে আমাকে জেলে যেতে হয় আমি জেলে যেতেও প্রস্তুত আছি।
২৮ র্মাচ সোমবার বিকেলে শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন) নগর ভবনের সামনে নাসিকে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের আজীবন অধিষ্ঠাতা কর মওকুফের সনদ বিতরণ ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ২৭টি ওয়ার্ডের ৮২৯ জন মুক্তিযোদ্ধার অধিষ্ঠাতা কর মওকুফ করা হয়। মেয়র উপস্থিতিতে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নাসিকের প্যানেল মেয়র ওবায়দুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা মহিউদ্দিন, শাজাহান ভুইয়া, আব্দুল লতিফ, আব্দুর রাসেদ রাশু, মুক্তিযুদ্ধকালীন কামান্ডার আমিনুর রহমান, আব্দুস সাত্তার মরন, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মমকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার, সচিব হাবিবুর রহমান, কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মুন্না, শারমিন হাবিব বিন্নি প্রমুখ।
তিনি আরো বলেন, ছোট বেলা থেকে বাবার কাছে শিখেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা, সত্য বলা, সাধারণ মানুষের সেবা করা। একজন রণাঙ্গনের যোদ্ধার (প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকা) সন্তান হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের যতটুকু পারেছি সম্মান দিতে। যদি এর মধ্যে কোন ভুলত্রুটি থাকে তাহলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি হয়তো আপনাদের চাহিদা মত প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে কাজ করতে পারিনি। আমি আমার বাবাকে অসময়ে হারিয়েছি। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি তখন আমার বাবাকে হারাতে হয়েছে। এসময় মেয়র আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগের ভরাডুবির পর ২০০৩ সালে দেশের এসে নির্বাচন করি। এবং মেয়র নির্বাচিত হই। আবার ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর আমাকে ভোট দিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করেছেন। সেদিন নারায়ণগঞ্জবাসী যেভাবে আমার পাশে এসে দাড়িয়েছিল আমি আমার জীবনের বিনিময়ে সেই ঋন শোধ করতে পারবো না। তাই চুনকা পরিবারের পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করি ভবিষ্যতেও আপনারা আমার পাশে থাকবেন। আপনাদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে থেকে আলী আহাম্মদ চুনকা যেভাবে কাজ করে গেছেন আমিও সেভাবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই।
আমরা ৩২০ জন মুক্তিযোদ্ধার পৌর এলাকায় কর মওকুফ করেছিলাম। এরপর আমাদেরটা দেখে গাজীপুর পৌরসভাসহ অন্যান্য পৌরসভা করেছিলো। এবার আমরা সিটি এলাকার ৮২৯ জন মুক্তিযোদ্ধার আজীবনের জন্য হোল্ডিং টেক্স মওকুফ করেছি। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকদের নামে আমরা বিভিন্ন সড়কের নামকরন করেছি। আমরা নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে প্রতিটা কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জায়গা নির্ধারন করে দিয়েছি। এবং স্মৃতি রক্ষার্থে অনেক মুক্তিযোদ্ধার কবর পাকা করে দিয়েছি। আপনারা চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ কদমরসুল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারে জন্য জায়গা সংরক্ষন করে দিবো।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার এড.নুরুল হুদা, বন্দর উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার কাজি নাসির, নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা কমলা রানী কর, আইয়ুব আলী, নুর হোসেন মোল্লা, আব্দুল কাদির, মেহের আলী চৌধুরী, আবু জব্বার টিটু, আয়াত আলী, নুর আলম , আলহাজ্ব সৈয়দ লুৎফর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বাচ্চু, কবির হোসাইন, শরফুদ্দিনসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।