নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : রিও ডি জেনিরোর মারাকানা ফুটবল স্টেডিয়াম গ্রহের এই সেরা ফুটবলারকে আর নিরাশ করেনি। সাত বছর আগে সতীর্থদে ব্যর্থতার কারণে শিরাপা জিততে না পারার কারণে বেদনাহত মেসির কথা হয়তো মনে রেখেছিল মারাকানা। যে কারণে এবারের কোপা ফাইনালে নিজ দেশ ব্রাজিলের চেয়ে মেসির হাতে একটি ট্রফি তুলে দেয়াকেই স্রেয় মনে করেছে ফুটবলের মক্কা খ্যাত এই স্টেডিয়াম।
ফাইনালে ব্রাজিলকে ১–০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের পর এক দফা উল্লাস, আনন্দ উদযাপন কয়েছে মারাকানার বুকেই। ট্রফি নিয়ে সেখানে মেসির শিশু সূলভ উচ্ছ্বাস আর উল্লাস ছিল দেখার মতো।
সতীর্থদের সঙ্গে নাচলেন, গাইলেন, উল্লাসে মাতলেন, ভিক্টরি ল্যাম্প দিলেন, সতীর্থরা তাকে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে কোপা জয় উদযান করেছে। কিন্তু মেসির তর সইছিল না নিজ দেশে ফেরার জন্য। মাঠেই তাকে দেখা গেছে স্ত্রী–পূত্রদের সঙ্গে মোবাইলের ভিডিও কলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে।
সুতরাং, আর দেরি কেন ! রিও থেকে বিশেষ ফ্লাইটে করে সোজা মেসি এবং তার সতীর্থরা উড়ে গেলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে। সেখানকার এজেইজা বিমান বন্দরে এসে অবতরণ করেন লাতিন জয়ী মেসি এবং তার সতীর্থরা। ২৮ বছর আগে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতারা এভাবে সর্বশেষ একটি ট্রফি নিয়ে বুয়েন্স আয়ার্সের মাটি স্পর্শ করেছিলেন। এরপর সেই সৌভাগ্য আর হয়নি আর্জেন্টাইনবাসির যে, একটি শিরোপা উৎসব করবে!
অবশেষে সেই উপলক্ষ রচনা করে দিলেন মেসিরা। বিমানবন্দরে নামতেই ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় কোপা জয়ী আর্জেন্টিনা দলকে। এরপর তোলা হয় চ্যাম্পিয়ন লেখা দুটি বাসে। সেই বাসে করে পুরো বুয়েন্স আয়ার্স প্রদক্ষিণ করেন মেসিরা। পথের ধারে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ অভিনন্দন জানালেন মেসিদের।
করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে মেসিদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল না আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ)। যে করোনার কারণে স্বাগতিক হয়েও টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তবে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসা দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় ১১ই জুলাই রবিবার ভোরেই রিও ডি জেনিরো থেকে বুয়েন্স আয়ার্সে এসে পৌঁছান মেসিরা। সেখানে এসেই করোনা টেস্ট দিতে হয়েছে তাদের। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স অব আমেরিকা–২০২১ এবং ১৫ নাম্বার উৎকীর্ণ করা বাসে উঠে এসন মেসি অ্যান্ড কোং। ১৫ হচ্ছে কোপা আমেরিকা জয়ের সংখ্যা।
পুলিশ পাহারায় শহর প্রদক্ষিণ করার মেসি চলে যান নিজের জন্মভূমি রোজারিওতে। সেখানে গিয়েই স্ত্রী আনতোনেল্লা রোকুজ্জোকে আলিঙ্গানাবন্ধ করেন মেসি। ছেলেদের সঙ্গে সরাসরি ভাগাভাগি করে নিলেন শিরোপা জয়ের আনন্দ।
লিওনেল মেসির উত্থান–পতন খুব কাছ থেকে দেখেছেন স্ত্রী আন্তনেল্লা রোকুজ্জো। সবসময় আর্জেন্টাইন তারকার ছায়া হয়ে সঙ্গে মিশে ছিলেন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসির অর্জন নিয়ে সময়ই গর্ব করেন রোকুজ্জো। তবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির শূন্য হাত কখনোই পছন্দ করতেন না তিনি। অবশেষে তার সেই আক্ষেপ ঘুচল।
এবারের কোপা জিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পাশাপাশি মেসি হাসি ফুটিয়েছেন নিজ পরিবারেও। তাইতো দেশে ফেরার পর রোকুজ্জোর তাকে অভিবাদন জানানোর তর সইছিল না। ব্রাজিল থেকে রবিবারই দেশে ফেরেন মেসিরা। বিমানবন্দরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রোকুজ্জো। মেসিকে সামনে পেয়ে দৌঁড়ে কোলে উঠে যান। প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে আত্মহারা রোকুজ্জো, চুমু এঁকে দেন জাতীয় বীরকে।
দীর্ঘ ২৮ বছরের খরা কেটে যাওয়াই আর্জেন্টিনায় উৎসব চলছে। বিমানবন্দর থেকে মেসিদের তোলা হয় চ্যাম্পিয়ন লেখা দুটি বাসে। সেই বাসে করে পুরো বুয়েন্স আয়ার্স প্রদক্ষিণ করেন মেসিরা। পথের ধারে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ অভিনন্দন জানালেন মেসিদের। তবে সেই আনন্দের দিনে তারা ভুলে যাননি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে। ফুটবল ঈশ্বরের ছবি নিয়েই আনন্দ–উৎসব করছেন আর্জেন্টাইনরা। ২৮ বছরেন দুঃখ ভুলে গিয়ে আর্জেন্টিনা এখন পরিণত হয়েছে উৎসবের দেশে।