নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : মিয়ানমার ও ভারত সিমান্ত ছাড়িয়ে বিশাল পথ পারি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসেছে এক রোহিঙ্গা। ১৬ই সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালে আব্দুল্লাহ (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়। রোহিঙ্গা যুবকের হিন্দি ও বাংলার মিশ্রিত কথায় প্রতক্ষর্দশীরা জানতে পারে, মিয়ানমারে ওর মা, বোন ও ছোট ভাইকে কুপিয়ে, কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ওই দেশের মিলিটারিরা। সে কোনও মতে প্রাণ বাচিঁয়ে দুর্গম পথ পারি দিয়ে এখানে এসেছে।
এর আগে মিয়ানমার থেকে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে পশ্চিম বাংলায় ডুকেছিলো। তারপর আব্দুল্লাহ বুড়িমারী স্থলবন্দর, বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাত সাড়ে ১১টায় রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল্লাহ শহরে এসেই আতংকিত হয়ে তাকে দৌড়াতে দেখতে পায় হাসপাতালের সামনে অবস্থানরত কয়েকজন যুবক। এরপর তাকে থামিয়ে গুরুতর অসুস্থ দেখতে পেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এসময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুল্লাহর চিকিৎসার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবহিত করলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।
রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল্লাহ জানায়, অনেক দিন যাবৎ সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিকমত কিছু খেতে পারছেনা। চোখের সামনে তারঁ পরিবারকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখেছে। সেই হত্যার দৃশ্য আব্দুল্লাহকে এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে । বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালা, তাকে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। অনেক খাবার দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের সদাচরণে রোহিঙ্গা যুবক অনেকটাই খুশি। তাদের উদ্যেশে সে বলে ফেলে ( ইদার সাব আদমী, মিলিটারী আচ্ছা, আরিয়েনে বার্মা অর মিলিটারী সাব মারি ফেলে ) র্অথাৎ এখানকার মানুষ ও মিলিটারী ভলো, আমাদের এখানে বার্মা এবং সেনাবাহিনী সদস্যরা মেরে ফেলে।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ এর প্রতিবেদককে জানায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কর্মকান্ডের দৃষ্টান্ত রেখেছে। সারাবিশ্বে এখন বাংলাদেশ গর্বের পাত্র। রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল্লাহ মিয়ানমারের বাসিন্দা। তবে র্নিযাতনের শিকার হওয়ায় র্দীঘ পথ পারি দিয়ে এখানে সে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সে একদিকে অসুস্থ অপরদিকে চরমভাবে আতংকিত। মেরে ফেলার ভয় তারঁ ভিতর থেকে এখনো কাটেনি। তবে চিকিৎসক ও স্থানীয়দের সেবা সহযোগীতা পাওয়ায় সে এখন আমাদের কাছে অনেকটাই স্বাভাবিক। তাকে আমরা টেকনাফে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সেখানে তাদের নিরাপদ স্থান আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে জাতিগত দ্বন্ধে সেখানকার রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর হাতে র্নিযাতন, গণহত্যা, হামলার শিকার হওয়ায় এ দফায় প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের এসে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানো হচ্ছে। জীবিত অবস্থায় রোহিঙ্গাদের গায়ে আগুন দিয়ে পুড়ে মারা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রাণ বাচাঁতে এরই মধ্যে সিমান্তবর্তী স্থান চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন এলাকায় তাদেরকে অস্থায়ী আশ্যয়কেন্দ্র করে দেয়া হয়েছে। কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকরা কক্সবাজার বা টেকনাফের শরনার্থী শিবির ছাড়িয়ে বাঁশখালী, দোহাজারী, পটিয়া এমনকি চট্টগ্রাম শহরেও ঢোকার খবর পাওয়া গিয়ে ছিল। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম সহ সিলেটের সুনামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায়।
তবে অনিশ্চয়তায় রয়ে যায় কখনো কি রোহিঙ্গা যুবকটি তাঁর নিজ দেশে ফিরতে পারবে। রোহিঙ্গারা কি ফিরে পাবে আপন ভূমি, তাদের আপন দেশটি? এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের নয়, এখন সারাবিশ্ববাসীর। শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে কয়েকশত কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল্লাহ এখন হয়তো দেখা পাবে তার জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের। কিন্তু অনিশ্চয়তায় ঢেকে গেছে তাঁর ভবিষ্যত জীবন।