বিজয়ী-পরাজিতদের নিয়ে বন্দরের উন্নয়নের অঙ্গিকার করলেন সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী এবং পরাজিত উভয় প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এ সময় তিনি নির্বাচন চলাকালীন সময় প্রার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া ভুল বুঝাবুঝি ও মনোমালিন্যের বিষয়টি সুরাহা করেন। সেই ধামগড় ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নে সংগঠিত হওয়া পৃথক দুটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের জন্য উভয় মামলার বাদীকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন। পাশাপাশি ধামগড় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কামালা হোসেন এবং সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান এবং পরাজিত প্রার্থী কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ একে অপরের পারস্পারিক সহযোগীতায় ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো পরিচালনা করবেন বলেন প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

যেহেতু কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ উক্ত আলোচনা সভায় অনুপস্থিত ছিলেন তাই দেলোয়ার হোসেন প্রধান কাজিম উদ্দিন এর সাথে সাক্ষাত করে তাদের মাঝে ভূল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। আর ইউনিয়ন গুলোর উন্নয়ন কর্মকান্ড সহ প্রায় সকল কিছুই সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সকলের অভিভাবক হিসেবে বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদকে দায়িত্ব দিয়েছেন এমপি সেলিম ওসমান।

২রা জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুরে অবস্থিত উইজডম অ্যাটায়ার্সে বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা কুদরত-এ- খুদা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা সহ ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সকল চেয়ারম্যান প্রার্থী, বিজয়ী সকল মেম্বার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা উক্ত আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন।

ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে উক্ত আলোচনা সভার শুরুতে এমপি সেলিম ওসমান সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমাদের যা দায়িত্ব ছিল তা আমরা সঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি। করোনা মহামারির কারনে এলাকার মানুষ যেন সুস্থ থাকে অনাহারে মৃত্যু না হয় সেজন্য আপনাদের সাথে নিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করা, প্রয়োজনী সহযোগীতা প্রদান, টিকা গ্রহনে আগ্রহী করতে কাজ করেছি। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। এসব করতে করতেই চলে আসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচন করতে গিয়ে প্রার্থীদের মাঝে দ্ব›দ্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এ দ্ব›েদ্ধর অবসান দরকার। যারা বিজয়ী হতে পারেন নাই তাদের অনেকেই আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের কারনেই এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচনে হয়তো কেউ আহত হয়েছেন। কেউ দু:খ পেয়েছেন কেউ আনন্দিত হয়েছেন। কিন্তু আগামী ৫টি বছর আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। আমি সকলের মুুরুব্বি রশিদ ভাইকে সকল কিছুর দায়িত্ব দিলাম। উনি যেভাবে নির্দেশ করবেন আমি সেই ভাবে কাজ করবো। নির্বাচন নিয়ে যে সমস্ত মামলা হয়েছে তা যেন আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তুলে ফেলা হয়। আমি সবাইকে সাথে নিয়েই বন্দরের উন্নয়ন কাজ করবো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পর্কে সেলিম ওসমান বলেন, এখন আরেকটি নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচনে আমাদের দল থেকে কোন প্রার্থী দেওয়া হয়নি। তাই আমরা আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো নীতিতে আছি। আর এখানে যারা উপস্থিত আছেন আপনারা সবাই ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার লোক। তাই এই নির্বাচন নিয়ে আমার কোন কথা বলাও উচিত হবে না।

বিজয়ী চেয়ারম্যান মেম্বারদের উদ্দেশ্যে এমপি বলেন, আমাদের নানা সমস্যা। পুরান সমস্যা গুলো আমরা সমাধান করতে পারিনি। অতি বৃষ্টিতে রাস্তার কার্পেট উঠে গেছে। রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে। আপনারা যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তারা সকলের সপ্তাহে একবার আপনার পরিষদের মেম্বারদের নিয়ে বসবেন। তাদের সাথে এলাকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর আপনারা সে গুলো সমাধানে প্রস্তাবনা আকারে উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদ ভাইয়ের কাছে পাঠাবেন। চেয়ারম্যানরা যদি মেম্বারদের সাথে আলোচনায় না বসেন তাহলে কাঙ্খিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবেনা। আর চেয়ারম্যান যদি মেম্বাদের কথা না শুনেন তাহলে আপনারা মেম্বারারা সরাসরি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে যাবেন।

নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে  সেলিম ওসমান বলেন, আমার একটা স্বপ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। ৭টি ইউনিয়নে আমি ৭টি স্কুল নির্মাণ করতে পেরেছি। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আরো দুটি স্কুলের ভবন নির্মাণ করতে পেরেছি। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ইউনিয়ন এলাকার স্কুল গুলোতে পাঠদান বন্ধ ছিল। শহরের স্কুল গুলোর মত তারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি। এর মধ্যে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলো কিভাবে সঠিক ভাবে পরিচালনা করা যায় ভবিষ্যত প্রজন্মের লেখাপড়া পথ আরো সুগম করতে প্রতিটি স্কুলে উন্নত মানের পরিচালনা কমিটি দিতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে আপনারা এলাকার একজন মেম্বারকে অর্ন্তভুক্ত করবেন। প্রতিটি স্কুলের ছাদে ছাদ বাগান করা যেতে পারে এবং এটা সম্ভব। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজে আমি একটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছি। যেখানে ভিকারুনূননেছা স্কুলের শিক্ষককে সভাপতি করেছি যিনি এই বন্দরেরই সন্তান। কিন্তু স্কুলটি সাবেক সভাপতি একটি মামলা করে দিয়ে স্কুলের ২ হাজার ৩শত ছাত্রীর ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আপনারা এলাকার মানুষ তার কাছে যাবে তাকে বুঝিয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। যদি উনি তা বুঝেন তাহলে প্রয়োজনে উনাকে বাধ্য করবেন মামলা তুলে নিতে।

এমপি সেলিম ওসমান আক্ষেপ করে বলেন, জানিনা কেন যেন আমরা অভাগা। মদনগঞ্জে শান্তিরচরে নীট পল্লীর জন্য আবেদনের মাত্র ২১ দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। কিছু জমি অধিগ্রহন হয়েছে। কিন্তু দেখতে পারছি সেখানে কিছু ভূমি দস্যু জমি দখল করে বিক্রির পায়তারা করছে। এমন হলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। আমি যতটুকু জানতে পারছি আগামী তিন মাসের মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নাসিম ওসমান সেতুর কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তা নির্মাণ হয়নি। হিন্দুদের তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেটাকে পুর্নাঙ্গ একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সেই কাজটিও  আটকে আছে। হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ দিয়ে একটি ব্রিজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার এখন এখান দিয়ে বিজ্রের বদলে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ দিয়ে আন্ডারপাস করার চিন্তা করছেন। বন্দর উপজেলা আমার স্বপ্ন। কিন্তু আপনাদের মাঝে ঝগড়া থাকলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বন্দর এক সময় ডান্ডি ছিল। কিন্তু বন্দরে যে পরিমান শিল্প কারখানা হওয়ার কথা ছিল তা হয়ে উঠেনি শুধু মাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারনে।

সব শেষে তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, আমি শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য, আমার সহধর্মিনীও অসুস্থ্য, আমার বড় মেয়ে অসুস্থ্য। আমাদের সবার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা। আপনার সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। জানিনা সুস্থ্য হয়ে ফিরতে পারবো কিনা। তবে আমি আল্লাহর কাছে আরো অনেক দিন হায়াত চাই। আল্লাহ আমাকে হায়াত দিলে আমি আপনাদের সাথে নিয়ে আরো কিছু উন্নয়ন কাজ করে যেতে চাই।

আলোচনা সভায় এমপি সেলিম ওসমান ৭টি ইউনিয়নে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের তাদের নিজ নিজ এলাকার জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন এমন তিনটি করে সমস্যার কথা উপস্থাপন করতে বলেন এবং চেয়ারম্যানরা সেই মোতাবেক নিজেদের ইউনিয়নের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

জেলা যুব সংহতির আহবায়ক রিপন ভাওয়াল এর উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা কুদরত-এ খোদা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা, জেলা পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম আলীনূর, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলী, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম,এ গাজী সালাম, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, গোগনগর ইউনিয়নে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন, ধামগড় ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মুছাপুর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান, বন্দর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোক্তার হোসেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত