নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বদলগাছী নওগাঁ) : নওগাঁর বদলগাছী সদরে অবস্থিত প্রশাসনের নাকের ডগায় সুনামধন্য দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্টান মডেল সরকারী প্রার্থমিক বিদ্যালয় ও সম্প্রতি ঘোষিত বদলগাছী ( সরকারী) মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও যাতায়াতের রাস্তা দখল করে চলছে হাটবাজার। এতে শিক্ষার্থীদের পাশা পাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা,অভিভাবক ও কমলমতি শিক্ষার্থিরা চরম বিপাকে পড়েছে। গত বছর এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন স্কুলের অধেক মাঠ থেকে হাট-বাজার উচ্ছেদ করলেও চলতি বছরে আবারও স্কুলের গেট পর্যন্ত হাট বসিয়েছেন হাট ইজারদাররা । তা দেখেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছেন।
গত শনিবার ১৫ জুলাই সকাল ৯ টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় দুটির মাঠ ও রাস্তা দখল করে কাঁচা তরিতরকারির পাইকারী হাট বসিয়ে দেদারছে কেনা বেচা চলছে। দুর দুরান্ত থেকে আগত পাইকারেরা বড় বড় ট্রাক ও ভটভটি এনে স্কুল মাঠ দখল করে রেখে কাঁচামাল লোড আন-লোড করছে। সেই সাথে উপজেলার কৃষকেরা ভটভটি ও ভ্যান যোগে কাঁচা তরিতরকারী এনে ওই বাজারে বিক্রি করছে।বদলগাছীর প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তার মোড় থেকে শুরু করে স্কুল মাঠ, গেট ও থানার গেইট পর্যন্ত দখল করে হাঠবাজার চল্লেও যেন কেউ দেখার নেই।
স্কুল মাঠ ও রাস্তা দখল করে সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার দুই দিন হাট-বাজার বসে। এই দুই দিন দুটি স্কুলের প্রায় সাড়ে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ভ্যান গাড়ি, ভটভটি, সাইকেল ও ট্রাক সহ লোকজনের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এপাশ ওপাশ কাটিয়ে কোন রকমে স্কুলে যাতায়াত করছে। যে কোন মহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিন্তু শিশু নয়। ছেলে শিক্ষার্থীরা ওই হাট-বাজারের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ঠেলা ঠেলি করে স্কুলে পৌছিঁলেও মেয়ে শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়ে যায়। এই কারনে অনেক অভিভাবকেরা হাট-বাজারের দিন তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দেয় না। কারন স্কুলে যাতয়াতের পরিবেশের অভাবে সপ্তাহে দুই দিন যদি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে না পারে তাহলে বৎসরে প্রায় ১ শত দিন তারা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া ও বিভিন্ন দিবস ও এস.এস.সি পরীক্ষা চলাকালিন সহ প্রায় ৬ মাস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত থাকে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থিদের অভিভাবকেরা চরম উদ্বিঘœ হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমন কি থানা পুলিশের গেইট পর্যন্ত দখল করে হাট-বাজার চল্লেও পুলিশ প্রশাসনের ও কোন মাথা ব্যাথা নেই। অথচ দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে থানার রাস্তা ও গেইট পর্যন্ত হাট-বাজারের দখলে থাকায় থানা প্রশাসন কিছুটা হুমকির সম্মুখীন বলেও এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন।
এ বিষয়ে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি তার স্কুলের কমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাট-বাজারের দিন চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে জানান। এবং বিষয়টি নিয়ে বহুবার হাট-বাজার কর্তৃপক্ষকে অভহিত করে ও কোন লাভ হচ্ছে না। কারন স্কুল কর্তৃপক্ষের চেয়ে হাট-বাজার কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন গত বছর স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে স্কুল মাঠ থেকে অর্ধেক হাট-বাজার উচ্ছেদ করেছিলেন কিন্তু এ বছর আবারও কিছুদিন থেকে হাট ইজারদাররা আবারও স্কুলের গেইট পর্যন্ত হাট-বাজার বসিয়েছে। এবং বিষয়টি স্থানী প্রশাসনকে অবহিতও করা হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা। তিনি আরও জানান বিষয়টি নিয়ে গত বছর স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সহ কয়েকবার স্কুল মাঠ থেকে হাট-বাজার উচ্ছেদ এর জন্য লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারী করনের ঘোষনা হয়েছে। তিনি আশা করেন বিষয়টি এখন সরকারে স্থানীয় প্রশাসন সহ শিক্ষামন্ত্রায় সুদৃষ্টি দিয়ে স্কুল মাঠ থেকে হাট-বাজার উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত সহ খেলাধুলা ও বিনোদন সহ নিরবিচ্ছন্য পাঠ দানের উপযোগী করনে গুরুত্ব পূর্ন ভুমিকা রাখবেন।
থানার সামনে রাস্তা থেকে শুরু করে গেইট পর্যন্ত হাট-বাজার চলা প্রসঙ্গে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জালাল উদ্দীন এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার আমার থানার ও স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় এমপি সহ উপজেলা নির্বহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করেছি এবং হাট ইজারাদারদের একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুনছে না। থানার গেইট পর্যন্ত হাট-বাজার চলছে ইহাতে থানা কি হুমকির মুখে পড়েনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অবশ্যই থানার গেইট পর্যন্ত হাট-বাজার চলায় থানা হুমকীর মুখেও পরে। তিনি আরও বলেন এ বিষয়ে আগামী আইন-শৃংখলা মিটিংএ আমি এই হাট অপসারনের জন্য জোর দাবী তুলে ধরবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুসাইন শওকত বলেন, তিনি স্কুল মাঠে হাট-বাজার বসায় শিক্ষার্থীদের চলাচলের যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা তিনি অবগত রয়েছেন। গত বছর স্কুল মাঠ থেকে অর্ধেক হাট সরানোর পর আবারও এবছর স্কুলের গেইট পর্যন্ত হাট লাগলো কি ভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে জায়গায় হাট স্থানান্তর করা হয়েছিলো সেই জায়গাটি আর দেবেনা । তাই হাট স্কুল গেইট পর্যন্ত লেগেছে।
অপরদিকে নতুন হাটের জায়গা প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায় করে ভরাট করলেও তা কোন কাজে আসছেনা। বর্তমান ঐ জায়গাতেও অনেক লোকজন ঘরবাড়ী স্থাপন করে বসবাস করলেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে।
এ বিষয়ে ইজারাদার এর পার্টনার পুন্যর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দুই বৎসরে এখনও পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন টাকা পয়সা গ্রহন করেন নাই। গত বছর স্কুল মাঠ থেকে হাট অর্ধেক অপসারনের পর আবারও আপনারা স্কুলের গেইট পর্যন্ত হাট বসালেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনই আমাদের এই জায়গা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন মহল ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা দ্রুত স্কুল মাঠ থেকে হাট-বাজার উচ্ছেদ করে দুটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত নিরাপদ করনের জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আসু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।