নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ ২৭ই ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। গুলশানে হোটেল লেকসোরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মিডিয়া কমিটির আয়োজনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, ২ ও ৩ মার্চও পালন করছি। আমরা ২ মার্চ কেনো করছি? সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আ স ম আবদুর রব। তিনি তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন। আমরা সেটাও পালন করছি, দ্যাট ইজ এ পার্ট অব হিস্ট্রি। ৩ তারিখ কি? স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ সাহেব। এটাকে অস্বীকার করব কি করে ? আজকে তার রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন, রাজনৈতিক দল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দ্যাট ইজ রিয়েলিটি, দ্যাট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি।
তিনি আরো বলেন, ঠিক একইভাবে যে ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমানের অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তার সন্মান, তার মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন তখন এই কথা বলবেন ৭ মার্চের ডাকে হয়ে গিয়েছিলো কিনা সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে। ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে।
বিএনপি মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেন, কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও নয়। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য সকলকে উদঘাটিত করতে হবে। এজন্য জোর দিয়ে বলছি, আমরাও যুদ্ধের সময়ে যুবক, আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময় আমাদের সামনে জ্বল জ্বল করছে। কে বক্তৃতাতে ৭ মার্চে কি বলেছিলেন, পরবর্তীকালে ২ মার্চে কি বলেছিলেন, ৩ মার্চে কি বলেছিলেন, ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী কি বলেছিলেন পল্টন ময়দানে এগুলো সব ইতিহাস। একই সঙ্গে মাহবুবউল্লাহ কি বলেছিলেন সেটাও একটা ইতিহাস।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৬ই মার্চ শহীদে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনটাই অস্বীকার করা যাবে না।
জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ে গেছে। ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেব, আমি আগের রাতে নির্বাচন করে সরকার লুট করবো। আমি কোষাগার খালি করে দেব। আমি একজন লেখক, একজন নিরীহ মানুষ, তিনি লেখেন সেই অপরাধে তাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে, আপনারা সাংবাদিকরা তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আপনাদের প্রায় ৪০০ জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী। কত জনকে জেল খাটতে হয়েছে। আপনাদের ফটোগ্রাফার কাজল, তার আগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আলোক চিত্রী শহিদুল আলম এরা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য। আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি, এজন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করবো। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি পালন করার ওই একটাই উদ্দেশ্য যে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য আমরা এদেশ স্বাধীন করিনি। এখানে আমাদের কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে, বাংলাদেশের মালিক জনগণ এটা মূল কথা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব বাতিল করলো, না করলো তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না। আর এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না। বিএনপিরও কিচ্ছু যায়-আসে না।
বিএনপিতে রনাঙ্গণের সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরে যিনি চেয়ারপারসন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনিও স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন অংশগ্রহণকারী ও নির্যাতিত নেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং আজকেও তিনি যে লড়াইটা করছেন এখনও কারাবন্দি আছেন। তার একমাত্র লক্ষ্য গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য।
এ সময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক আহমেদ দীপু, দৈনিক কালের কন্ঠের উপ-সম্পাদক এনাম আবেদীন, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, প্রধান প্রতিবেদক লোটন ইকরামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিডিয়া কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমার রুমন, শায়রুল কবির খান, ফারজানা শারমিন পুতুল, ইয়াসির খান, মাহমুদা হাবিবা, শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মীর সোলায়মান, নুরুল ইসলাম সাজু, বাবুল তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।