নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ কর্তৃক জেএমবির ৩ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ কর্তৃক গত এপ্রিল মাস হতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সকল অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ ৫০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতারকৃত এ সকল জঙ্গিদেরকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রমের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রাপ্ত সে সকল তথ্যাদি যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের পর জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত যে সকল সদস্য এখনও গ্রেফতার হয়নি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল গত ৩০ অক্টোবর সোমবার বিকেল ৫টা হতে ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ২টা র্পযন্ত রাজধানীতে ৩টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে। এসময় রামপুরা থানাধীন এলাকা হতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মামলা নং-২৭, তারিখ ১১ জুন ২০১৭ এর এজাহার নামীয় পলাতক আসামী ১। মনিরুল ইসলাম@ মনিরুল@ হাফেজ মনির(৩২), জেলা-ঝিনাইদহ, ২। মোঃ আল আমিন@ আলামিন (৩০), জেলা-ময়মনসিংহ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মামলা নং-১০৫ তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৭ এর এজাহার নামীয় পলাতক আসামী ৩। মোঃ মহসিন তালুকদার@ মিন্টু (৪৮), জেলা-যশোর এদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামী মনিরুল ইসলাম @ হাফেজ মনির এর নিকট হতে এসময় বেশ কিছু জঙ্গীবাদী বই ও লিফলেট জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকালে র্যাব-১১ এর অতিঃ পুলিশ সুপার মো: শাকিল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যেভাবে জেএমবিতে এরা সক্রিয় :
জেএমবি সদস্য মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিরুল ও হাফেজ মনির। বয়স ৩২। ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে আল কোরআন এবং ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিষয়ে স্নাতক পাশ করে। এবং ২০১২ সাল থেকে শিশু ও বয়স্কদের প্রাইভেট পড়ানোর কাজ করছিল। ২০১৩ সালে সে ইতিপূর্বে র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত মোঃ ওয়ালীউল্লাহ চিশতী@ জনি@ মোহাম্মদ এর সাথে পরিচয় এবং তার সাথে জসিম উদ্দিন রাহমানি এবং পরবর্তীতে মাওলানা আব্দুল হাকিম এর মসজিদে যাতায়াত, উগ্রবাদী ভিডিও আদান প্রদানের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হয়। ২০১৫ সালে জনি@ মোহাম্মদ এর মাধ্যমে রামপুরা এলাকার দাওয়াতী শাখার আমীর সাইফুল গনি চৌধুরী এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং সাইফুলের মাধ্যমে সে জেএমবিতে যোগদান করে দাওয়াতী কাজ শুরু করে। সে ইতিপূর্বে র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত সাইফুল গনি চৌধুরী, নবীন, ফারুক, আব্দুর রহমান@ রুবেল, জনি@ মোহাম্মদ এবং মাসুদসহ অসংখ্য জেএমবির সদস্যদের সাথে ঢাকার রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমন করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের নোট শীটের মাধ্যমে জেএমবির পক্ষে দাওয়াতী কাজ করে আসছিল। সে এই পর্যন্ত ২০-৫০ জনকে দাওয়াত দিয়ে জেএমবির পক্ষে কাজ করার জন্য সদস্য হিসেবে তৈরী করেছে।
জেএমবি সদস্য মোঃ আল আমিন ওরফে আলামিন। বয়স ৩০। ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানাধীন একটি স্কুল হতে ৮ম শ্রেণী পাশ করে এবং ২০০৫ সাল হতে রামপুরায় একটি টেইলার্সে চাকুরী করে। সে ২০১৭ সালে ইতিপূর্বে র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত মোঃ ওয়ালীউল্লাহ চিশতী@ জনি@মোহাম্মদ এর মাধ্যমে জসিম উদ্দিন রাহমানির মসজিদে যাতায়াত এবং তার উগ্রবাদী ভিডিও দেখে সে জঙ্গীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সে জনি@মোহাম্মদ এর মাধ্যমে রামপুরা এলাকার দাওয়াতী শাখার আমীর সাইফুল গনি চৌধুরীর সাথে পরিচিতি এবং ঘনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে জেএমবিতে যোগদান করে রামপুরা এলাকায় দাওয়াতী কাজ শুরু করে। সে তার টেইলারিং কাজের অন্তরালে জনি@ মোহাম্মদ, সাইফুল গনি চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবু ইউশা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ@ইমন, নবীন, ফারুক, মনিরুল ইসলাম, আবদুর রহমান@রুবেল এর সাথে কুমিল্লা, রাজশাহী, মু›িসগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে দাওয়াতী কাজের পাশাপাশি জেএমবির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির কাজ করে আসছিল।
জেএমবি সদস্য মোঃ মহসিন তালুকদা ওরফে মিন্টু। বয়স ৪৮। ২০১৫ সাল থেকে মান্ডা এলাকায় চায়ের দোকানের ব্যবসা করে আসছে। সে ২০০৮ সালে জনৈক রাসেলের মাধ্যমে ধানমন্ডিতে জসিম উদ্দিন রাহমানির মসজিদে যাতায়াত শুরু করে এবং কিছুদিন জসিম উদ্দিন রাহমানির রেকর্ডকৃত অডিও ক্যাসেট বিক্রির ব্যবসা শুরু করে এবং ধীরে ধীরে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হয়। ২০০৯ সালে উক্ত মসজিদে ইতিপূর্বে র্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত আনোয়ার হোসেন এর সাথে পরিচয় হয় এবং ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তার হাত ধরে জেএমবিতে যোগদান করে দাওয়াতী কাজ শুরু করে। এই দাওয়াতী কাজ করার সময় ২০১২ সালে আরেক জেএমবির সদস্য আব্দুর রহমান@ রুবেল এর সাথে পরিচয় হয় এবং আব্দুর রহমান@ রুবেল এর কাছে তার বড় মেয়েকে বিয়ে দেয় এবং উভয়ই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতী কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আব্দুর রহমান@ রুবেল এর হাত ধরে সে জেএমবিতে যোগদান করে এবং নাফিস, আতর আলী, সিয়াম ও রুবেলসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের মধ্য দিয়ে দাওয়াতী কাজ করে। তার চায়ের দোকান জেএমবি সদস্যদের মিলন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। সে তার চায়ের দোকান জেএমবি সদস্যদের তথ্য আদান প্রদানের স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।