নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ সিকদার এর বিরুদ্ধে এবার মাহবুবুর রহমান নামে একজন জাহাজ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এছাড়াও বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের নামে সভা, সমাবেশ ও মিছিল ছিল তার একটি লোকদেখানো কৌশল, নৌপথে তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে এমনটাই বলছে ভুক্তভোগী অসহায় শ্রমিকরা।
তবে সম্প্রতি উল্লেখিত হত্যাকান্ডে সবুজ সিকদারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ হলেও অদৃশ্য শক্তিতে প্রকাশ্যে রয়েছে সবুজ ও তার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা। এর আগেও নারায়ণগঞ্জ ও এর আশেপাশের নৌ সীমায় সবুজ সিকদার বাহিনীর দূর্ধর্ষ চাঁদাবজির সংবাদ একাধিকবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এত অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও এখনো পুলিশ কেন তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ! দ্রুত তাকে উপযুক্ত শাস্তি না দেয়া হলে পর্যায়ক্রমে খুন ও চাদাঁবাজিতে বিশাল স¤্রাজ্য কায়েম করে ফেলবে।
তাছাড়া গত বছর ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের নৌপথে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছিলো তিন চাঁদাবাজ। ওইসময় জেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ শিকদারসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন এমভি আগৈলঝড়া-১১ জাহাজের মাষ্টার সৈয়দ সেলিম।
আর এবার জাহাজ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযুক্তরা হলেন, কবির হোসেন, অলিয়ার রহমান, সবুজ শিকদার, জাকির হোসেন চুন্নু, নয়ন, রায়হান, সাইফুল ইসলাম, লিটন হোসেন ও রিপন প্রধান। তাদের মধ্যে সবুজ শিকদার ও জাকির হোসেন চুন্নু নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিজেদের দাবি করে থাকেন। এছাড়াও নৌযান শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ণের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ এবং জাকির হোসেন চুন্নু হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।
তবে সবুজ শিকদার এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, এটা নিছক মিথ্যা মামলা। আর মাহাবুব সে তো নিয়মিত জাহাজের শ্রমিকও ছিলনা আর আমাদের কোন প্রতিপক্ষও ছিলো না। সে ৫নং ঘাটের ওইপারে ভাড়া থাকতো। এর মধ্যে জাহাজে চাকরি করতো । আবার মন না চাইলে করতো না। শুক্কুর আলী সাহেবের মৃত্যুর পরের দিন আমি খবর পাইলাম যে একটা শ্রমিক স্ট্রোক করে মারা গেছে। এরপর লাশ দেশে নিয়ে গেছে। এর পরের দিন খবর পাইলাম পত্রিকায় বের হয়েছে, আমাদের লোক নাকি ওর সাথে মারামারি করছে। ওর সাথে তো আমাদের কোন শত্রুতাও নাই। আর সে আমাদের সংগঠনেরও কিছুনা। আমাদের সাথে ঝগড়া হওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা।
চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিলো এটা আমি অস্বীকার করি না। সেই মামলায় তারা থানার কর্মকর্তা তদন্ত করেছে। কিন্তু আমরা কোন সময় কোন জাহাজ থেকে চাঁদা তুলি নাই। আমাদের সংগঠনের যারা রেজিস্টার সদস্য হয় তার জন্য সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে মাসিক চাঁদা ১০ টাকা ২০টা করে নেয়। যারা আমাদের সংগঠনের শ্রমিক শুধু তারাই দেয়। তার বাইরে কোন চাঁদা নেয়া হয় না।
নৌ শ্রমিকদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শুক্কুর মাহমুদের ছত্রছায়ায় শীতলক্ষ্যা নদীতে চাঁদাবাজির রাম রাজত্ব কায়েম শুরু করেন সবুজ সিকদার বাহিনী। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন কার্গো জাহাজের মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভারদের উপর চলে বর্বর নির্যাতন।
সূত্রে জানা যায়, শতীলক্ষ্যা নদীতে প্রতিদিন ১শ থেকে ১২০ টি কার্গো জাহাজ চলাচল করে। এসব জাহাজ থেকে প্রতিদিনই ব্যাপক চাঁদাবাজি করে থাকে সবুজ সিকদার বাহিনীর লোকজন। শ্রমিকদের দাবি, একটি জাহাজ ট্রিপ নিয়ে আসার পরই হামলে পড়ে চাঁদাবাজরা। তারা ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক চাঁদা হাতিয়ে নেয়।
বছর খানেক আগে আলমগীর ড্রাইভার নামে একজনের কাছ থেকে জোর করে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেয় সবুজ সিকদার বাহিনী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি থানায় জিডিও করেছেন, জানিয়েছিলেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নবী আলম মাষ্টার।
তিনি জানান, নৌযান শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের নামে জোর পূর্বক চাঁদাবাজি করে থাকে। এর নেতৃত্বে রয়েছে এই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার। নৌ পথে সকল অপকর্মের মূলহোতা সবুজ।
এব্যপারে সদর মডেল থানা ওসি আসাদুজ্জামান জানান, যেহেতু মামলাটি এ থানার নয়, তাই আমি অবগত নই। তবে আমাদের পক্ষ থেকে অপরাধীর কোন ছাড় নেই। আমরা কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।