নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) নৌকাকে পরাজিত করতে দলের ভেতর ও বাইরের সব পক্ষ মিলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ভোটের আগে প্রচারের শেষ দিন ১৪ই জানুয়ারি শুক্রবার ফতুল্লা থানাধীর দেওভোগ এলাকায় নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এখানে কিন্তু আইভীকে পরাজিত করার জন্য অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে গেছে। সেই পক্ষটা ঘরের হতে পারে, বাইরেরও হতে পারে, সব মিলে গেছে। কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়, কীভাবে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ভোটে ঝামেলা করা যায়। কিন্তু সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।
১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত তৈমুর আলম খন্দকার, যিনি ভোটে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইভী বলেন, সহিংসতা, আমি মনে করি না আমার তরফ থেকে এরকম কিছু হবে। কারণ আমার ওই ধরনের কোনো বাহিনী নেই। আমি কোনো দিন সহিংসতা করিও নাই।
নির্বাচনে সহিংসতা হলে নৌকারই ক্ষতি হবে মন্তব্য করে গত ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র পদে থাকা আইভী বলেন, সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। আমার ভোটাররা আসতে পারবে না। আমি যদি বলি একটি পক্ষ তাই চাচ্ছে? আমার নির্বাচন সবচেয়ে বেশি জমজমাট। সেই জায়গাগুলোর মধ্যে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোট কেন্দ্রে আসা বাধা দিতে পারে।
নারী ও তরুণ ভোটাররা আওয়ামী লীগের পক্ষেই ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন নৌকার প্রার্থী। তিনি বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে বরাবরই বলে আসছি যে, ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর থাকে। আমার নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে। আমার ইয়াং ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই ইনশা আল্লাহ।
সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংতা করে, তাহলে আমার মনে হয় সেটা ঠিক হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব, এই ব্যাপারে যেন সজাগ থাকে তারা।
কারা সহিংসতা করতে পারে বলে আইভী আশঙ্কা করছেন, সেই প্রশ্ন তার সামনে রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, যারা বাধা দেয় বা সহিংতা করে তারা একটা সময় গিয়ে এক হয়ে যায়। আপন আর পর কী ? এখানে নির্বাচনটা হচ্ছে আইভী ভার্সেস অনেক কিছু। সেই ক্ষেত্রে অনেক পক্ষই এক হতে পারে।
বহু পক্ষের খেলা বন্ধ করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে কোনো আবেদন রেখেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, কেন্দ্রের সাথে আমি ওইভাবে আলাপ করিনি। গত ২৮ তারিখ থেকে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলাম। আমার মনে হয় নির্বাচনের পরে এগুলো কেন্দ্র দেখবে। তাছাড়া দলের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার তো, এই ব্যাপারে আমার কথা না বলাটাই যুক্তিসংগত।
সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন হলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করার প্রত্যাশার কথা বলেন আইভী। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয়, কোথাও যদি কেন্দ্র বন্ধ না হয়, তাহলে ইনশাল্লাহ আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পাস করব। এটা আমার চাচা (তৈমূর) নিজেও জানেন যে, আমার এখানে কী অবস্থান।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তৈমুর আলম খন্দকারের করা নানা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইভী বলেন, উনার অভিযোগগুলো দিয়ে আমাকে দুর্বল করার কোনো সুযোগ নেই। আমাকে প্রভাবিত করতে পারবে না। আমি খুব স্ট্রং মনোবলের মানুষ। আমি আমার জায়গায় আছি। আমি সব সময় সহিংসতার বিপক্ষে। আমি উনাকে কালকে বলিনি, উনি আমার ছোট বেলা থেকেই চাচা। উনি আমাকে জন্মের পর থেকেই দেখে এসেছেন। এই বাড়িতেই অজস্রবার এসেছেন, আমার বাবার (নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ চুনকা) কর্মী ছিলেন উনি। সুতরাং উনার সাথে আমার সম্পর্ক ও বন্ডিংটা অনেক আগের। যুদ্ধের ময়দানে হয়ত আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী।
আরেক প্রশ্নের জবাবে নৌকার প্রার্থী আইভী বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে যারা নারায়গঞ্জ এসেছেন, তারা কাউকে প্রভাবিত করছেন না। এই অভিযোগটা যারা করছেন তা সঠিক না। তারা হয়ত অন্য কোনো কারণে পর্যবেক্ষণে আসছেন, যাতে এখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, নিজ দলের মধ্যে। এতবড় দল একটু তো প্রবলেম থাকতেই পারে। আমার মনে হয় সেটাই তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোটের মাঠে উনার কোনো নেগেটিভ কিছু বলেননি।
গত তিনটি নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছেন জানিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমার প্রত্যেকটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল, প্রত্যেকটিরই একেক রকমের ক্যারেক্টার ছিল। এই নির্বাচনও চ্যালেঞ্জবিহীন নয়, বরং বিভিন্ন কারণে আরও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।