নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষে অথবা জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে বেশ কয়েকমাস সময় থাকলেও আগে থেকেই প্রস্তুতী নিতে শুরু করেছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ইতমধ্যে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে উভয়ের নেতাকর্মীরা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তবে জেলাজুড়ে নিরব ভূমিকায় শুধু জাতীয় পার্টি।
অথচ নানা আয়োজনে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করলেও তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোন সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। একেবারেই যেন নিশ্চুপ হয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। আবার কারো কারো মন্তব্য এবারের কমিটিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা আছে তারা রাজপথে সচল নয়। তাই এই অচল কমিটিকে সচল করতে না পারলে এবং এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কি ভূমিকা থাকবে এ নিয়ে সংশয় বোধ করছে তৃণমূলে থাকা নেতাকর্মীরাও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়। একই সাথে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে জাতীয় পার্টিকে এবার চরম মূল্য দিতে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জাতীয় পার্টি যদি সকল আসনে নিজ দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে পাশে পাবে না আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের। যা ছাড়া নারায়ণগঞ্জে শক্তিহীণ জাতীয় পার্টি। আবার জোটগত নির্বাচন করলে এখন আওয়ামীলীগের সাথে মাঠে থাকাটাও বাঞ্চনীয়। যেহেতু কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি এখনো পরিস্কার করা হয়নি। এজন্য নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরাও বিভিষিকায় পার করছে।
তথ্য মতে, প্রায় দুই যুগ পর অনুষ্ঠিত হয়েছছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলন। বন্দরের সমরক্ষেত্র ৭১এর মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সানাউল্লাহ সানুকে সভাপতি ও আবু নাইম ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি এবং মোদাসেরুল হক দুলালকে সভাপতি ও নাসিক কাউন্সিলর আফজাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের দুইটি আসনে রয়েছে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাসিল করেছেন পদও। যারা হলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। অপরজন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার সেলিম ওসমান। তারা ছাড়াও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব খোকা মোল্লা এবং প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে অধিষ্ট রয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানও।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি নাসিম ওসমান এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতে ১৯৯৯ সালে এই সম্মেলন হয়েছিল। এই দুই নেতাই এখন প্রয়াত। তখন রাইসুল হককে সভাপতি ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি এবং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ দুলালকে সভাপতি ও আবুল খায়ের ভূইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে শহর জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
মূলত নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করেন ওসমান পরিবারের বড় সন্তান নাসিম ওসমান। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং দৃঢ়তার কারণে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টি একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০১৪ সালে নাসিম ওসমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি যেন পঙ্গুত্ব বরণ করে কোন রকম খুড়ে খুড়ে চলছে।
অন্যদিকে একই আসনে তারই ছোট ভাই সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য হলেও শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায়ও ভুগছেন। একমাত্র সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া বর্তমানে জেলা বা মহানগর জাতীয় পার্টির কোন আয়োজনে উদ্যোগ নিতেও দেখা যায় না। যদিও এরই মধ্যে প্রয়াত নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান দলটির নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার চেষ্টা করছেন। সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়সহ দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতেও দেখা যায়। তবে বিভিন্ন বাধার মুখে থেমে যেতে হচ্ছে বলেও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
আর ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজ আসনে অবস্থান তৈরীতে। ইতমধ্যে নিজ সমর্থিত লোকদের উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পার্টিতে মূল্যবান পদে অধিষ্ট করিয়েছেন। নিজ আসনের জাতীয় পার্টিতে দল ভারি করতে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের অংশ গ্রহন করিয়েছেন। কিন্তু জেলা পর্যায়ে তেমন কোন ভূমিকা লক্ষা করা যাচ্ছে না তার। তাছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো দলগুলো যখন বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ত তখন জাতীয় পার্টি অনেকটাই নিরবতা পালন করেছে কেন? তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন জেলা জুড়ে সর্বত্রে।