নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নিয়ম বেধেঁ কোরবানী পশু বেচাঁর জন্য অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য অনুমতি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, সদর উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন। তবে অধিকাংশই হাটেই ওইসব নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদাররা। তাদের ইচ্ছে মত ব্যস্ত সড়কের পাশেই খুটি লাগিয়ে গরু বেধেঁ করছে বিকিকিনি। এমনকি সিদ্ধিরগঞ্জে শতকোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প ডিএনডিতে সৌন্দর্যবর্ধনের লেকপাড়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে গরুর হাট বসানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে পরিদর্শণ গিয়ে উচ্ছেদ করা কিংবা ইজারা বাতিল করে দেয়ার মত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে মো. সালামের নামে কোরবানির পশুর হাটের জন্য সিআইখোলা বালুর মাঠ ইজারা এনছেন। তবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের টিশার্টেও দেখা যায় তার প্রতিচ্ছবি। যিনি তার ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে সিআইখোলা আবাসিক এলাকার ৪টি স্থান দখল করে মোট ৭টি স্থানে এখন অবৈধভাবে গরুর হাট বসিয়েছেন। যেখানে শতকোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অধীনে ডিএনডি খালের পশ্চিম পাড়ে ৩০ ফুট প্রস্থে জমিতে গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়াও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও লাইট পোস্ট স্থাপন করে খালের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের স্থানে লাগানো গাছ কেটে ৫, ৬ ও ৭নং মাঠ চিহিৃত করে গরুর হাট বসানো হয়েছে। গাছ কেটে ও পাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে হাট বাসনোর কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্ত। এছাড়াও খালের পানিতে দেয়া হয়েছে সোচাগার। ফলে দূষিত হচ্ছে পানিও সেখানকার পরিবেশ। এখানেই শেষ নয়, তিতাস গ্যসের রাইজার থেকে ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ নিয়ে তা রান্নার কাজে ব্যবহার করছে গরুর বেপারীরা। যা কোনভাবেই ঠিক নয়। রয়েছে বড় দূর্ঘটনারও শংকা।
তবে এলাবাকাবসী জানিয়েছেন, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম তার অনুসারী জনৈক মো. সালামের নামে কোরবানির পশুর হাট ইজারা নিলেও হাটের পরিচালনায় রাখা হয়েছে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামেরই ছেলে মাহবুব ও ইলিয়াছ ইসলাম লিয়নকে। লিয়ন নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি কামরুল হুদা বাবু গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ওইস্থানে কয়েকশত ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করেছি, খালের পাড় বাঁধাই করেছি। কিছু দিনের মধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এই মুহূর্তে এসব জায়গার গাছ কেটে হাট বসানো ঠিক হয়নি।
এদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জের দশপাইপ এলাকাতে বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। গাড়ি আর গরু যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তবে যানজট নিরসনে হাট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। বরং একের পর এক সাড়ি সাড়ি বাশঁ রেখে গরু দিয়ে লম্বা লাইন করে রাখা হয়েছে। যে কারণে ওই পথে চলাচলকারী ও এলাকাবাসীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের চলাচল করা দুস্কর হয়ে পেড়েছে। একই অবস্থা সৈয়দপুর এলাকার উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন দেয়া ৩ টি হাটের। মাঠের গরু রেখে দেয়া হয়েছে সড়কে। যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, নির্ধারিত স্থানে পশুর হাটের জন্য অনুমোদন নিলেও তারা সীমানা অতিক্রম করে ইচ্ছেমত দখল করে হাট বসাচ্ছে যা অবৈধ। মহল্লার ভেতরে পশুর হাট বসার কারণে চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। পশুর ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে ১০টি পশুর হাটের ইজারা দেয়। সবমিলিয়ে ১৮টি দরপত্র আহ্বান করেছিল। একটি বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি উপজেলা থেকে ১১টি হাটের ইজারা দেয়া হলেও পরবর্তিতে ১টি হাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে নয়ামাটি এলাকার মারকাজ মসজিদ সংলগ্ন হাট চলমান রয়েছে। কিন্তু তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতীত সড়ক, মহাসড়ক কিংবা জোর পূর্বক অন্য কারো জায়গায় হাট বসানো যাবে না এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এসব কোন শর্তই মানছেন অধিকাংশ পশুর হাটের ইজারাদারগণ।