নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় কাপড় ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান চৌধুরী ওরফে সেলিম চৌধুরী হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদলত। সেইসঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০শে জুন সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাবিনা ইয়াসমিনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো : আলীরটেকের ডিগ্রিরচর এলাকার সালাউদ্দিনের ছেলে ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও তার কর্মচারী ফয়সাল।
পাশাপাশি অন্য আরেক ধারায় তাদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ২ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ২ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারা হলো : সোলেমান মিয়া ও মোহাম্মদ আলী হোসেন ওরফে লেবার আলী। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার থান কাপড় ও ঝুট ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিমের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করে একই এলাকার ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও তার সহযোগিরা।
পরবর্তীতে সেলিম পাওনা টাকা ফেরত চাইলে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পূর্ব–পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। এ ঘটনায় সেলিম নিখোঁজ হলে তার স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখা বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। নিখোঁজের ৮ দিন পর ৯ এপ্রিল পুলিশ মোহাম্মদ আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাটি খুঁড়ে সেলিমের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। পরে আসামীদের গ্রেপ্তার করা হলে তারা হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জাসমীন আহমেদ জানান, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ ফতুল্লার আলীরটেকের ডিগ্রিরচর এলাকার মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনে পাওনা ২ লাখ টাকা চাইতে গিয়েছিলেন কামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিম। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পাওনা টাকা চাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে মোহাম্মদ আলী ও তার লোকজন সেলিম চৌধুরীকে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে গোডাউনে মাটি চাপা দিয়ে রাখেন। পরে গত ৯ এপ্রিল তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় সেলিমের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত আজ সেই মামলার রায় ঘোষণা করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর জাসমিন আহমেদ বলেন, এই মামলায় আদালত ১১ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই আদালত এই রায় প্রদান করেছেন। তবে আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান নিহতের স্বজনরা। রায় ঘোষণার পর মামলার বাদি ও নিহত সেলিমের স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখা ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আসামীরা জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করলো। তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের গোডাউন থেকে লাশ উদ্ধার হলো। তারপরেও কেন তাদের যাবজ্জীবন সাজা হলো ? আমি তাদের ফাঁসি চাই।
তবে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রিয়াজুর রহমান তালুকদার বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।