নারায়গঞ্জ বার্তা ২৪ ( রুপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল রেখে সারাদেশে চলতে শুরু করেছে গণপরিবহনগুলো। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছে না নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের বিআরটিসি বাসে। ১৮ই জুলাই রবিবার রূপগঞ্জের বিআরটিসির টিকিট কাউন্টারে ঘুরে দেখা যায় এমনই চিত্র। দিনের প্রথমে প্রহরে লোক দেখানো স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বেলা ভাড়ার সাথে সাথেই স্বাস্থ্যবিধি ও চলমান লকডাউনের বিধি নিষেধ লঙ্গন করেছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকপক্ষ। আদায় করছে বাড়তি ভাড়া কিন্তু থাকছে না শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব। বাসের ভিতরে যাত্রীদের গাদাগাদি ছিল উদ্বেগজনক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভুলতা-গাউসিয়া- কাঞ্চন ব্রিজ-কুড়িল বিশ্বরোড রুটে প্রতিদিনই প্রায় লাখো মানুষের যাতায়াত। এই রুটে ২০ টি নন এসি বিআরটিসি ডিপো রয়েছে। প্রতি বাসে সিট আছে ৫৮ টি । যাত্রী নেয়া হচ্ছে ৭৫/৮০ জন। প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রায় গাড়িতে আগের মতই গাদাগাদি করে যাত্রী ভরছে কাউন্টারের লোকজন। টিকিট কাউন্টার থেকে গাড়ি ভর্তি যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে প্রতিটি বাস আর রাস্তার মাঝে যেখানে সেখানে থামিয়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী। ফলে সিটের তুলনায় দ্বিগুণ যাত্রী চলছে প্রতিটি গাড়িতে। বাসে ছিটানো হচ্ছে না কোন জীবাণুনাশক স্প্রে। থাকছে না কোন প্রকার শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব।
সরকারি নির্দেশনায় শারীকি দূরত্ব বজায় রেখে টিকিট বিক্রি, বাসে ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার কথা থাকলেও কাউন্টারগুলোতে থাকছে না শারীরিক দূরত্ব ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবস্থা। যাত্রী উঠানোর আগে মাপা হচ্ছে না শরীরের তাপমাত্রা। আর ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছে অনেক বাস শ্রমিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যাত্রী বলেন, এই রুটে ২৫টি বাস থাকলেও বেশি লাভের জন্য প্রতিদিনই ৪/৫টি গাড়ি বন্ধ রাখে। একদিকে বাসের সংখ্যা কম অন্যদিকে যাত্রীদের চাপ। প্রতিটি বাসেই চাপাচাপি করে যাত্রী নেয়া হয়। ঠেকায় পড়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিআরটিসিতে চলতে হচ্ছে।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকামুখী যাত্রী আব্দুস সাত্তার জানান, ভাড়া নিচ্ছে ৬০ শতাংশ বেশি। অথচ বাসের প্রতি সিটে যাত্রী বসানোর পরেও দাড় করিয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। বাসের সিটগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। একজন যাত্রী নামার পরপরই সেই সিটে নতুন আরেকজনকে বসানো হচ্ছে। এর ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অধিক হারে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
কালাদী এলাকার আবুল হোসেন বলেন, যাদের জরুরী প্রয়োজন তারাই বিআরটিসি বাসটি ব্যবহার করে। করোনার কারণে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাস মালিকরা অথচো গাদাগাদি করে যাত্রী নিচ্ছে। তাহলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কই থাকলো ?
বিআরটিসিতে দাড়িয়ে থাকা যাত্রী রহুল আমিন বলেন, ঢাকায় খুব জরুরি কাজ আছে, তাই বাধ্য হয়েই বাসে উঠেছি। সরকারি নির্দেশনায় যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে সেগুলোর কোনটাই মানছে না বিআরটিসি বাসটি। তবু ঠেকায় পড়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
নিয়মিত যাত্রী শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল রেখে গাড়ি চলাচলের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকালে ‘লোকদেখানো’ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে। দুপুর থেকে স্বাস্থ্যবিধির কোন লেসমাত্র দেখাযায়নি কোন টিকিট কাউন্টার ও বাসগুলোতে।
ভুলতা-কুড়িল বিশ্বরোড রুটের বিআরটিসি ডিপোর লীজমালিক জিল্লুর রহমান বলেন, এই রুটে বিআরটিসির ম্যানেজার আছে। তিনি এসব বিষয়ে ভাল জানেন।
বিআরটিসির গাজীপুর ডিপোর ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্গন হয়েছে কিনা জানিনা। মিডিয়ার সাথে আমাদের কথা বলা নিষেধ। তবে কোন অভিযোগ থাকলে হেড অফিসে কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, গণপরিবহন চলাচলের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার কোন রকম ব্যত্তয় ঘটলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।