নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ অফিসের খামখেয়ালিপনা ও আনুমানিক তৈরি ভুতুড়ে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলার সহস্রাধিক গ্রাহক। অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ইচ্ছে মতো রিডিং বসানোর কারণেই এমন হয়েছে। এতে করে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ । তাই করোনার চেয়ে নারায়ণগঞ্জের বড় আতঙ্ক এখন ডিপিডিসির ভুতুড়ে বিল !
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে সকল পেশাজীবী মানুষ। এতে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত জেলা নারায়ণগঞ্জে শিথিল লকডাউনেও ভালো নেই কেউ। কিন্তু এতে কি-বা আসে যায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। ঘরে বসেই অনুমানে মিটার রিডিং বসিয়ে গ্রাহকদের বিল তৈরি করছেন রিডাররা, আবার সেইসব ভুতুড়ে বিল সই করে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েও উদাসিন ডিপিডিসি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে হাজিগঞ্জ এলাকার একজন গ্রাহক জানায়, প্রতি মাসে তার বিদ্যুত বিল আসে চার থেকে সাড়ে চার শত টাকার মধ্যে। কিন্তু এবার দুই মাসের বিল যুক্ত হয়ে এসেছে ১৩শত টাকার মত। এতে করে বেশ বিস্মিত তিনি। করোনা সংকটে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতেই যেখানে কষ্টকর। সেখানে এমন বিল দেখে ছুটে চলে যান নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসি কার্যালয়ে। কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্তও করেছেন বর্ধিত বিল সমন্বয় করে দিবেন। কিন্তু আসা যাওয়ার হয়রানীতে তিনি অতিষ্ট বলে জানান ওই গ্রাহক।
এদিকে করোনা পরস্থিতিতে সরেজমিনে সোমবার (১৯ মে) বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জের হাজিগঞ্জস্থ ঈশা খাঁ রোডের ডিপিডিসি কার্যালয়ে গেলে প্রবেশমুখে লক্ষ্য করা যায়নি গ্রাহকদের জন্য কোনরকম স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা। ফলে সামজিক দুরত্ব না মেনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযোগ কিংবা বিল দিতে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। রয়েছে লোকবল সংকট। দুইজনের স্থানে একজন বকেয়া বিলগুলো গ্রহণের কারণে তৈরী হচ্ছে লম্বা লাইন। তাই ঘন্টার ঘন্টা দাড়িয়ে এই রমজানে রোজা রাখা গ্রাহকরা বেশ ভোগান্তিতে আছেন বলেও জানান।
বর্ধিত বিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিডিডিসি কার্যালয়ে সমন্বয় করতে এসে ভুক্তভোগী আরেকজন গ্রাহক জানায়, মিটার রিডাররা বাড়িতে মিটার না দেখেই, বিল বসিয়ে দিয়েছে। তাই তার সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার বিল ৪ হাজার টাকায় পরিণত হয়েছে। তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, যেখানে ৫টাকা ইউনিট করে বিল দেই আমরা। তারা ইচ্ছেমত বিল করতে গিয়ে ৮-১০টাকা প্রতি ইউনিটের বিল তৈরী করেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো এটা দেয়া সম্ভব না। গতকাল আমার মত হাজার হাজার গ্রাহক উপরের রুমটিতে শুধু বিল সংশোধনই করিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিলগুলি সমন্বয় করে দিবে। আজও এসেছি, কিন্তু কর্মকর্তারা থাকতেও বলছে নেই। তাই আগামীকাল আবার আসতে হবে। প্রতিদিনই এখন আমাকে একটি করে চক্কর দিতে হচ্ছে। এতে করে নতুন ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে বেশ কয়েকবার চলে সংশ্লিষ্টদের লুকোচুরি খেলা। হতে হয় বাধার সম্মুখিন। উপর থেকে নীচতলা উঠানামার পর অবশেষে দেখা মিলে ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম এর নিবার্হী প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমানের সাথে। এসময় তিনি নিশ্চিত করে বলেন গ্রাহকদের বর্ধিত বিলগুলি সমন্বয় করার কাজ চলছে। কিন্তু কোনভাবেই তিনি অফিসিয়ালী বক্তব্য দিকে রাজি হননি। এতে করে কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিষদ কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভুতুড়ে বিল নিয়ে একই অবস্থায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। খানপুর, তল্লা, আল্লামা ইকবাল রোড, জামতলা, মাসদাইর, বাবুরাইল সহ সদর ও ফতুল্লা থানাধীণ অন্যান্য এলাকার হাজার হাজার গ্রাহক এখন শুধু সড়কে আন্দোলনে নামা বাকি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়েও চলছে কঠোর সমালোচনার ঝড়।
এমন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ তালহা খালেদ নামে আরো একজন তাদের বিদ্যুত বিল ও মিটার এর ছবি সংযুক্ত করে ফেসবুকে তুলে ধরেন, আমার এপ্রিল-২০২০ এর বিদ্যুৎ বিলে ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হয়েছে =১২৯৭৭= ইউনিট অথচ আজকে মে-২০২০ মাসের ১৮ তারিখে মিটারে আমার ব্যবহৃত ইউনিট দেখাচ্ছে =১২৭৪৮=ইউনিট! এপ্রিল মাসের বিলে অন্তত ২৫০/৩০০ ইউনিট বেশী দেখিয়ে আন্দজে বিল বানানো হয়েছে! গ্রাহকের সঙ্গে দেশের এই পরিস্থিতিতে এমন জুলুমের কি অর্থ বহন করে!
ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে আগে অনলাইনে অভিযোগ করা যেত এহেন সমস্যা হলে কিন্তু কয়েকদিন যাবত ওদের ওয়েবসাইটের অভিযোগ অপশন টা কাজ করছে না, মনে হয় ইচ্ছে করেই সার্ভার ডাউন করে রেখেছে কারন অরা জেনে বুঝেই এমন আন্দাজে বিল করেছে সবার।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মিটার রিডারের সাথে কথা হলে তিনিও নিশ্চিত করে জানান, বিদ্যুত বিলে এবার একটু সমস্যা হয়ে গিয়েছে। তবে আমরা সমন্বয় করে দিবো। চিন্তার কোন কারণ নাই।
সচেতন মহল বলছেন, মহামারী করোনা সংকটকালে বিভিন্ন সেবা সংস্থা যেখানে বিলম্ব ফি মওকুফ করে গ্রাহকদের নানা ধরনের সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে, ঠিক সেসময় নারায়ণগঞ্জের বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও খাম খেয়ালিপনা, এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। দ্রুত এর লাঘাম টেনে না ধরলে করোনাকালে সরকারের প্রশংসিত নানা উদ্যোগকে এসব সংস্থ্যা ম্লান করবে বলে মন্তব্য করছেন।