নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রদিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সকল অপরাধ দমনে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন নবাগত পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল পিপিএম ((বার)। এর প্রেক্ষিতে সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যলয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়া সংস্থ্যার নেতৃবৃন্দ, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবন্দসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্ততাগণ।
এসময় সকলের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনামূলক মতামতের উপর ভিত্তি করে বক্তব্য রাখেন নবাগত পুলিশ সুপার মোস্তফা রাসেল। শুরুতেই মাদকের বিষয়ে হুশিয়ারী দিয়ে তিনি বলেন, মাদকের ব্যাপারে কিন্তু আমাদের জিরো টলারেন্স জারি আছে। যদি আমি কোনদিন প্রমাণ পাই আমার কোন পুলিশ সদস্য এসব ঘটনার সাথে জড়িত তাহলে তাদের চাকরি থাকবে না। আমি প্রত্যেকটা পুলিশলাইন ও থানায় গিয়েছি । তাদের উদ্দেশ্যে আমি একটা কথাই বলবো। এই মাদক সেবন করা, বিক্রি করা ও বিক্রেতাকে সহায়তা করা বড় অপরাধ। আর এই অপরাধীদের কোন মাফ নেই। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলছি। আপনারা রেজাল্ট পাবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আমীর খসরু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসিকিউশন) শাওন শায়লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-১) মো. আছলাম মিয়া, উপ-পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ, আইসিটি এন্ড মিডিয়া) হাফিজুর রহমান।
কিশোর অপরাধের বিষয়ে এসপি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে অলরেডি কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে আমি সাংবাদিক ভাইদের সাথে বসেছিলাম। সেখানেও বলেছি আমাদের বিট পুলিশিংয়ের সময় প্রত্যেকটা বিটে বিটে আমি কিশোর গ্যাং এর সংখ্যা জানবো। কোন এলাকায় কিশোর গ্যাং আছে, এই পরিসংখ্যান টা আগে আমার জানা দরকার। ইতিমধ্যেই আমি আমার বিটের অফিসারদের কাছে এ পরিসংখ্যানটা আমি চেয়েছি। এটা হাতে পেলেই আমি আপনাদেরকে বলে রাখি এবং সাংবাদিক ভাইদের করে বলেছি। আমি ইনস্ট্যান্ট অপারেশনের নামবো। এটা আমি আপনাদের মাধ্যমে সারা নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানাতে চাই, তখন যদি কেউ তদবির করেন। আর যদি আমি দেখি সে প্রকৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং অপরাধী। তা হলে তাকেও আইনের আওতায় আসতে হবে।
যানজট বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের কিন্তু হিউজ যানজট। এখানেও যানজট। এর কারণ হলো যত পরিমাণ গাড়ি এখানে চলে সে পরিমাণ কিন্তু রাস্তা নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে রাস্তা-ঘাট যদি আরো কিছু করা যেত তাহলে যানজট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হতো। তারপরেও এ জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসনে পুলিশ একটা স্টেপ নেবে। তবে বিআরটিএ, শ্রমিক ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশন সহ অন্যান্য যারা আছে তাদের সবার সাথে বসে আমরা একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করব । আমার মনে হয় এটা বেস্ট হবে। কারণ আমি চাইলেই একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। আর আমি একা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম সেটা বাস্তবায়ন না হলে কোন লাভ হবে না। যদি সবাই মিলে আমরা সিদ্ধান্তটা নেই তাহলে সেটা বাস্তবায়ন হবে এবং এটা ট্রাফিক পুলিশ সহ সবার পক্ষে ব্যাপারটা ইজি হবে।
ব্যাটারী চালিত রিক্সার বিষয়ে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশের যেটা হয়েছে। মানুষ তার জীবিকা নির্বাহের কারণে চালায় রিক্সা, আর রিক্সা থেকে এখন রূপান্তর হয়েছে অটোরিকশা । আর এটা এমনভাবে হয়েছে, যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে এটা হয়েছে তাও না ৷ আবার রাষ্ট্র তাদের নির্মূল করে উচ্ছেদ করে ফেলবে তাও না । কারণ এখানে অনেক মানুষের আয়ের পথ জড়িয়ে আছে । তাই আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা সবাই যদি একসাথে বসে কিভাবে এটা সমাধান করা যায় এটা খুঁজে বের করি তাহলে সেটা মনে হয় ভালো হবে।
নারী নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু গার্মেন্টে যারা কাজ করে তাদের মালিকদেরও দায়িত্ব, যে শ্রমিক কাজ করে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। অন্য কোন পুরুষ শ্রমিক দ্বারা যাতে সে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয়, নির্যাতনের শিকার না হয়। কিংবা কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে কোন সমস্যা আছে কিনা। আর যদি সড়কে অথবা নিজ বাড়িতে কোন প্রকার নারী নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ে পুলিশকে শুধু ইনফর্ম করবে। পুলিশ আইনগতভাবে যা করার সবই করবে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, সদর উপজেলা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এড. নুরুল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলহাস, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা মহীলা পরিষদের রোকসানা আকসির, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অফিস সেক্রেটারী মো. কামাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ টিটু, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জেলা ক্রীড়া সংস্থ্যার নেতৃবন্দ।