খানপুর হাসপাতালে দালালের খপ্পরে সেই নির্যাতিত নারী !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় ইউসুফ মেম্বারের নেতৃত্বে যৌনকর্মী আখ্যা দেওয়া নির্যাতিত তিন নারীর একজন ফাতেমা বেগম খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতাল দালালের খপ্পরে পড়েছেন। চিকিৎসকের স্বাক্ষর নকল করে ওই রোগীর টিকিটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়ায় আসলাম খান নামের এক দালালকে জরুরী বিভাগ থেকে আটক করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দালাল আসলাম খান খানপুর মেইন রোড এলাকায় ভাড়া থাকেন, তার পিতার নাম আলমগীর খান। জরুরী বিভাগ সংলগ্ন ভাই ভাই ফার্মেসী নামক একটি ঔষধের দোকানে তিনি দালাল হিসেবে কাজ করেন বলে জানা গেছে। সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১২ টার দিকে জরুরী বিভাগে এই ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের ঘটনার পর ফাতেমা বেগমকে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাকে ওই সময় জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ঔষধ সহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। গতকাল তার মেয়ে জামাইয়ের সাথে হাসপাতালে এসে এক্সরে করেন ফতেমা। ওই সময় দালাল আসলাম কৌশলে তার কাছ থেকে টিকিট নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন। এরপর রিপোর্ট দেখাতে এসে বিপাকে পরেন ওই রোগী।

ওই সময় এক্সরে ছাড়া আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার টিকেটে দেখতে পেয়ে ক্ষেপে যান ওই চিকিৎসক। পরে রোগীর ওই টিকেট জদ্ধ করা হলে  হাসপাতালের স্টাফরা দালাল আসলাম খানকে আটক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট সোর্পদ করলে ওই দালাল তার দোষ শিকার করে বলেন, কমিশনের আশায় তিনি এ কাজ করেছেন।

এই ব্যপারে ফাতেমা বেগমের মেয়ে জামাই বলেন, হাসপাতালে এক্সরে করে রিপোর্ট দেখানোর জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় দালাল আসলাম তাকে ঘিরে ধরে। তখন আসলাম বলেন, পুরো শরীরের পরীক্ষা করেন। রোগী দ্রুত ভাল হয়ে যাবে। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে পরীক্ষা লেখায় আসতাছি। এরপর রিপোর্ট দেখাতে গেলে ওই চিকিৎসক ক্ষেপে যান এই পরীক্ষা কে লিখছে?
এই ব্যপারে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন জনান, এটা খুবই অন্যায় কাজ ও দ্বন্ডনিয় অপরাধ। একজন চিকিৎসকের স্বাক্ষর নকল করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া। এতে করে দূর্নাম হয় চিকিৎসকের। এর পূর্বেও একজন রোগীর টিকিটে এই দালাল চিকিৎসক সেজে পুলিশ কেইস সিল সহ চিকিৎসা দিয়েছিল।

এদিকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারের পিএ সিদ্দিকুর রহমান আমাদের প্রতিবেদককে জানান, বহিরাগত দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা  রোগী। প্রতিদিন মাইকে ঘোষনা করা হচ্ছে দালাল থেকে সাবধান। তারপরও দালাল ধারা প্রতারনার শিকার হচ্ছে রোগী। রোগী ভর্তিতে দালাল, পরীক্ষা-নিরিক্ষাতে দালাল, ওষুধ কিনতে দালাল হস্তক্ষেপ করছে। ফলে দূর্নাম হচ্ছে এই আধুনিক হাসপাতালের। দুই এক দিনের মধ্যে দালাল প্রতিরোধের জন্য আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে বর্হিবিভাগে ও হাসপাতাল চত্বরে এই দালাল চক্র বিচরণ করে থাকে। রোগী এলেই তাঁরা এগিয়ে আসে। এদের মধ্যে বেশীর বাগ মহিলা দালাল রয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে হাসপাতালে ডাক্তার নেই। অনেক ভীড় ঠিক ভাবে চিকিৎসকরা রোগী দেখেন না। বাহিরে দশ টাকার ডাক্তার আছে আপনার সমস্যাসা শোনে ভাল টিপমেন্ট দিবে। আমার সাথে চলুন। এমন কথার প্রেক্ষিতে অনেক সহজ সরল রোগী হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা না নিয়ে দালালদের সাথে দশ টাকার ডাক্তারের সরাপর্ন হয়।

এছাড়া হাসপাতালে ঢুকতেই যে কারো নজরে পড়বে দালালরা রোগীর হাতে টিকিট দেখলেই এগিয়ে এসে টিকিট নিয়ে ওষুধ কিনবেন বলে সম্বোধন করে বলে আমার দোকান আছে। কালির বাজারের পাইকারী দরে ওষুধ বিক্রি করি। এভাবে রোগীদের ফাঁদে ফেলে নিয়ে যায় দালালদের নির্ধরিত দোকানে। সুত্রমতে জানা গেছে, এসব দোকান থেকে ২০% কমিশন পেয়ে থাকে দালালরা।

এছাড়া জরুরী বিভাগ সংলগ্ন যে সব ওষুধের দোকান রয়েছে হাতে গনা দুই একটি ছাড়া সব দোকানেরই দালাল রয়েছে। দেখলে মনে হয় এরা হাসপাতালের স্টাফ। শিফট বাই শিফট এরা হাসপাতালে ডিউটি করে থাকে। রোগী চিকিৎসা নিলেই  বেরুলেই দালালরা রোগীর হাত থেকে টিকেট নিয়ে চলে যায় তাঁর নিদিষ্ট দোকানে। অভিযোগ রয়েছে হাজার ১২শত টাকার ওষুধ দুই আড়াই হাজার টাকা দাম নিচ্ছে এসব ওষুধের দোকানের মালিকরা। এনিয়ে মাঝে মাঝেই রোগীদের সাথে দোকানীদের বাকবিতন্ডাও ঘটে।

প্রসঙ্গত, এরআগে এমপি সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে দালালমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়াও এই হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করতে ইতোমধ্যেই ৫শত শয্যায় উন্নতিকরণের নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু গুটি কয়েক দালালচক্রের সদস্যের জন্য সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম সরকারী এই হাসপাতালটির। তাই এই হাসপাতাল দালাল মুক্ত করতে এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভোক্তভোগীসহ সর্বসাধারণ।

add-content

আরও খবর

পঠিত