কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে মাদ্রাসাগুলোর নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সহিংসতা ঘিরে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে ২৫ই এপ্রিল রবিবার যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসায় বোর্ডের স্থায়ী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সরকার স্বীকৃত নিয়ন্ত্রক বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে কওমি মাদ্রাসাগুলোর ছয়টি বোর্ড রয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, কওমি মাদ্রাসাগুলোর সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত পদক্ষেপ নেবে শুধু আলহাইআতুল উলয়া।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সভায় কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে অন্য কারও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে।

এই বোর্ডের অধীন এক বা একাধিক বোর্ড কিংবা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি আলহাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া পৃথকভাবে কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

এদিকে মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি হরতালকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা তাণ্ডব চালানো হয়। সে সময় পুলিশের সাথে সংঘাতে প্রাণহানিও হয়।

২০১৩ সালে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালানো সংগঠনের নেতারা এবাররাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের উসকানি দিয়েমাঠে নামিয়েছিল বলে পুলিশের ভাষ্য।

গত কয়েক দিনে হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নাশকতা সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত এবং বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় পদে রয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে রবিবার বোর্ডগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ সভা করে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত জানাল।

বোর্ডের অফিস সম্পাদক অছিউর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান অস্থিরতা থেকে এই শিক্ষা ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং আলেমদের মান বজায় রেখেস্বাভাবিক অবস্থায়দ্বীনি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ারসুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলহাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদ্রাসার হিফজ মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়ার জন্য এবং রমজানের পর মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করারও সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতেগ্রেপ্তার হওয়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, আলেমওলামা এবং মসজিদের ইমাম মুসল্লিদের মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর কথাও বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সেখানে বলা হয়, আলহাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকারকে জানাতে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবে। মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি মোহাম্মদ আলী মুফতি জসীমুদ্দীন থাকবেন এই প্রতিনিধি দলে।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তত্ত্বাবধানের জন্য ১৫ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন সাবকমিটি গঠন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আলহাইআতুল উলয়ার অধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম জিহাদী, সাজিদুর রহমান, আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, ছফিউল্লাহ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুছলেহুদ্দীন রাজু, উবায়দুর রহমান মাহবুব, মহাসচিব মাহফুজুল হক, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গার সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন মহাসচিব শামসুল হক, আযাদ দীনী এদারায়ে তালীম এর মহাসচিব আব্দুল বছীর; তানজীমুল মাদারিসের সভাপতি মুফতি আরশাদ রাহমানী, মহাসচিব ইউনুস এবং মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী এবং আলহাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুহাম্মাদ ইসমাইল সভায় উপস্থিত ছিলেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত