নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত নাম শামীম ওসমান। ১৯৮১ সালে সরকারী তোলারাম কলেজের ভিপি নির্বাচিত হওয়া থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে নাম আসে তাঁর। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন তিনি। আর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাজনীতিক অঙ্গণে ভয়ংকর তকমা লাগে তার গায়ে। ওইসময় স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে পুরো নারায়ণগঞ্জ ছিল তার আয়ত্তে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শামীম ওসমান ও তার অনুগতরা ছিলেন এ জেলার হর্তকর্তা। একটা সময় স্থানীয়রা দাবী করতো, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহসও দেখাতে পারেনি কেউ। ২০০১ সালে ১৬ জুন একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় চলে আসেন শামীম ওসমান। পরবর্তিতে ওই বছরেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর শামীম ওসমান প্রথমে ভারতে চলে যান। সেখান থেকে তিনি যান কানাডায়।
এরপর আবারো দীর্ঘ সময় পর ২০০৬ সালে ফিরে এসে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হলেও ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনে আগের দিন তিনি দেশত্যাগ করেন। ফিরে আসেন ২০০৯ সালের এপ্রিলে। ততদিনে তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার পক্ষে কাজ করলেও সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হতে হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীকে (বর্তমানে প্রয়াত) বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দেয়। একতরফা এই নির্বাচনে এমপি হয়ে নারায়ণগঞ্জে নিজের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করেন শামীম ওসমান। এরপর গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্র ত্বকী হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর সাত খুনে ওসমান পরিবারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল উঠে। যা নিয়েও অনেক বেগ পেতে হয় এই প্রভাবশালী পরিবারটিকে।
এছাড়াও ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনষত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে যে পরিবারটির উত্থান দুই পুরুষ বাদে নিজেদের কর্মকান্ডের কারণেই তাদের সম্মান আজ ভূলুন্ঠিত। বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজের ক্ষতি নিজেই না করে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার উত্থান ও পতন তারই দৃষ্টান্ত।
এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত রাজনীতিক শামীম ওসমানকে নিয়ে ২০১৪ সালের ১১ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দেশটির কালো তালিকার প্রথম দিকে নাম থাকায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ওই সময় এমপি শামীম ওসমান যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা চাইলে দেওয়া হয়নি। ভিসার আবেদনের বিপরীতে ঢাকার দূতাবাস তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, আপনার আবেদনটি আজীবনের জন্য প্রত্যাখ্যান করা হলো। তখন বলা হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স না মেলায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের সুপারিশের ভিত্তিতে শামীম ওসমানকে আজীবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু সকল বাধা বিপত্তি কেটে অবশেষে চলতি বছরের গত জুন মাসের ৯ তারখি তিনি পারি দিয়েছেন সেই নিষিদ্ধ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে! সে দেশে ভ্রমনে এখন তার বৈধতা মিলেছে। সেখানে তার সাথে গিয়েছেন স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি। তাছাড়া শামীম ওসমান কতটা আমোদপ্রেমী তা দেখিয়ে দিয়েছেন তার একমাত্র পুত্র ইমতিনান ওসমান ওরফে অয়ন ওসমানের বিয়ের অনুষ্ঠানেই। নাচ-গান এর পাশাপাশি গায়ে মেখেছেন রংও। ঠিক তেমনি দীর্ঘদিন পর বহুল আলোচিত শামীম ওসমানকে কাছে পেয়ে আবেগ ও আনন্দে আমেরিকায় অবস্থানরত পুরো বাংলাদেশী কমিউিনিটি। সেখানকার সেন্ট্রাল আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
নিষিদ্ধ সেই দেশে এখন তিনি মুক্ত! যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনে শামীম ওসমানের এখন বৈধতা রয়েছে। তাই আমোদ প্রেমী মানুষটি এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানেই। তাছাড়া আমেরিকায় নারায়ণগঞ্জের প্রবাসীদের আয়োজনে বিলাসবহুল স্কাইলাইন প্রিন্সেস নামের রিভাস ক্রুজ এ আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে যান। ওইসময় বাংলাদেশের পতাকা হাতে এমপি শামীম ওসমানের একটি ছবি ইতমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক ভাইরাল হয়েছে। যেখানে প্রবাসীরা আমেরিকার ছোট ছোট পতাকা হাতে চারপাশ ঘিরে আছেন, আর মধ্যমনি হয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে যেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে অনেকগুলো গানও পরিবেশন করে প্রবাসীদের মাতিয়ে তুলেছেন তার স্ত্রি সালাম ওসমান লিপি।