নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : এবারের ঈদ-উল -আযহায় বিভিন্ন জেলায় সড়ক, রেল ও নৌপথে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত ও ১১৫৩ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগঠনটি এ দাবি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ দিনে ১৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৪৮ জন নিহত ও ১০৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে ৮টি নৌ দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি রেলে কাটা পড়ে ৭ জন নিহত, চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ৫০ জন আহত হন।
২১ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রীয় সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত তিন বছর যাবত বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বিগত ঈদ-উল-ফিতরে লম্বা ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও এবারের ঈদে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে দাবি করে যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত এ সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঈদ যাত্রা শুরুর প্রথম দিন ৭ সেপ্টেম্বর ১৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ২৪ জন আহত, ৮ সেপ্টেম্বর ১২টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ৩২ জন আহত হন, ৯ সেপ্টেম্বর ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ১৮৫ জন আহত, ১০ সেপ্টেম্বর ১৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৮ জন আর আহত হন ৫৪ জন।
একইভাবে ১১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয় ২০টি দুর্ঘটনা। এতে ১৮ জন নিহত, ১৭৬ জন আহত হন। ১২ সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন প্রাণ হারান, আহত হন ৫৪ জন। ১৩ সেপ্টেম্বর ১০টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ২১ জন আহত হন। ১৪ সেপ্টেম্বর ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ১৬৪ জন আহত হন, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ৮৭ জন আহত ও ১০ম দিন ১৬ সেপ্টেম্বর ২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৮৩ জন আহত হন। শেষ দুইদিন ১৭ সেপ্টেম্বর ২৯টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ১০৪ জন আহত এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ৯২ জন আহত হন।
এসব দুর্ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য ও এক কারারক্ষি নিহত এবং ২১ পুলিশ সদস্যসহ ও ১০ জন সেনা সদস্য। দুর্ঘটনার মধ্যে ২টি বাস ডাকাতিও রয়েছে। এতে আহত হন ২২ জন।
যাত্রী কল্যাণের প্রতিবেদন :
যাত্রী কল্যাণের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৭২টি মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ১১২ জন নিহত ও ৫৫৭ জন আহত হন। ২৭টি বাস চাপার ঘটনায় ২৯ জন নিহত ২০ জন আহত হন। ২০টি পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৩৪ জন নিহত ২৬৪ জন আহত হন। ৮টি ট্রাক চাপার ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ৪ জন আহত হন। এছাড়াও নানা কারণে সংগঠিত ৮৩টি দুর্ঘটনায় ৮২ জন নিহত ও ২৬৮ জন আহত হন।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ :
সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে- অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক ওভারটেকিং, সড়কে রোড ডিভাইডার না থাকা, বেপরোয়া মনোভাব, ট্রাফিক আইন না মানা, অদক্ষ চালক ও রাস্তার ত্রুটিকে দায়ী করেছে সংগঠনটি।
দুর্ঘটনারোধে সুপারিশ :
দুর্ঘটনারোধে ১৫টি সুপারিশও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মহাসড়কে দ্রুত গতি ও ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, রাস্তার রোড সেফটি অডিট নিয়মিত করা, সড়ক মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা (৬) ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, সংগঠনের উপদেষ্টা কাজী মাসুদ আহম্মেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান, বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনিষ্টিটিউটের সহকারি অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিক্যালের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির, যাত্রী কল্যানের মনিটরিং সেলের সদস্য মো.সামসুদ্দীন চৌধুরী, এম মিলাদ উদ্দিন মুন্না প্রমুখ।