নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে হাতি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৮ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার প্রার্থীদের হাতে এসব প্রতীক তুলে দেন।
এ ছাড়া মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ হাতপাখা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস হাত ঘড়ি, খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন দেয়াল ঘড়ি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসীম উদ্দীন বট গাছ ও স্বতন্ত্র কামরুল ইসলাম বাবু ঘোড়া প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। এদিকে প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করতে করতে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় ফিরে যান। এতে মিছিলের নগরীতে পরিনত পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা।
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং। এ নির্বাচনও এর বাইরে নয়। তিনি সব নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন। আগামী নির্বাচনে আপনার প্রতিপক্ষ শামীম ওসমান নাকি তৈমুর সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর প্রতিপক্ষ সবাই। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে নৌকাকে সামনে রেখে। সুতরাং এই নৌকা বিজয়ের প্রতীক। তাঁর সঙ্গে জনগণ আছে, জেলা আওয়ামী লীগসহ সবাই আছে। যাঁরা নৌকায় ভর করে বিগত দিনে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিয়ে এসেছেন, তাঁরা কখনো নৌকার বাইরে যেতে পারবেন না। তাঁরা ঠিকই নৌকায় উঠে আসবেন।
আইভী আরও বলেন, গত তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনও কোনো ঝামেলা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে। এবারও কোনো ঝামেলা হবে না। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হয়ে আসবে। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, তারপরও আমাদের এ শহরেই বসবাস করতে হবে। সুতরাং আমরা এমন কিছু করব না, যাতে নারায়ণগঞ্জের মান ক্ষুণ্ন হয়। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করব, আমরা সহনশীলতার সঙ্গে নির্বাচন করব।
শামীম ওসমানের সহযোগিতা চাইবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, তিনি তাঁর বড় ভাই, সাংসদ। তিনি এমনিতেই সরাসরি প্রচারনায় আসতে পারবেন না। কিন্তু তিনিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। মান অভিমান থাকতেই পারে। একটা দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তবে তিনি নৌকার বাইরে যাবেন না বলে আশা করেন।
এদিকে, প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে দলের নির্দেশে প্রার্থী হন। আবার দলের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। দলের সব নেতা–কর্মী তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর শক্তি জনগণ। জনগণ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পায়নি বলেই তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন।
তৈমুর আলম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সরকারদলীয় প্রার্থীকে নিয়ে সাংসদেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করছেন। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের উপস্থিতিতে ওই সমাবেশে মাইক ব্যবহার করা হয়েছে। অনুমতি নেওয়া ছাড়া মাঠে সমাবেশ করা হয়েছে। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তৈমুর আলম আরও বলেন, তাঁর শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে। তাঁর বাড়ি ঘরে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর চেম্বার জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কোথাও কারো সঙ্গে কোনো আপস করেননি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান বলেন, সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রসঙ্গত, আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৪জন। এরমধ্যে নতুন ভোটার বেড়েছে ৪২ হাজার ৪২৬ জন। এছাড়া এবার ২৭টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮৭টি, বুথের সংখ্যা ১ হাজার ৩০১টি। এছাড়া অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৯৫টি।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এবার নতুন ভোটার বেড়েছে ৪২ জাজার ৪২৬ জন। আগামী ১৬ জানুয়ারী নাসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো ১৫ই ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ দিন ছিলো ২০ ডিসেম্বর আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিলো ২৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ শেষ দিন ছিলো ২৮ ডিসেম্বর এবং আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে । নারায়ণগঞ্জের ২৭ টি ওয়ার্ডে এবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।