নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি ও সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আরেকটি চাঁদাবাজি মামলায় খালাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত। ৬ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে নূর হোসেনের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন পৃথক দুটি মামলায় রায় ঘোষণা করেন। একই আদালত একটি চাঁদাবাজি মামলায় নূর হোসেনসহ আট আসামিকে খালাস দিয়েছে।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) জাসমিন আহমদ জানান, সাত খুনের পর নূর হোসেনের বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্রগুলো জমা দিতে বলেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু নূর হোসেন সেই অস্ত্রগুলো নির্ধারিত সময়ে জমা দেননি। পরে পুলিশ রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালত ছয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, নূর হোসেনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলায় অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে খালাস প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে নূর হোসেনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে আদালতে নিয়ে আসা হয়। রায় শেষে তাকে পুনরায় কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছয় মামলার মধ্যে ২০১৪ সালে সাত খুনের পর নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১২ জুন ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে অটো রিকশা চালক সাইদুল ইসলামের মামলায় নূর হোসেন, তার ভাই নূর উদ্দিন, তাদের ভাতিজা শাহজালাল বাদল, লোকমান সহ চারজনকে আসামি করা হয়। এছাড়া শিমরাইলে নূর হোসেনের মাদক স্পট থেকে ২৯০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের এসআই শওকত হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। সাত খুনের পর নূর হোসেনের বৈধ অস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিল করে জেলা প্রশাসন। সেটি জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু সেটি জমা না দিয়ে নূর হোসেন দেশের বাইরে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হয়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত জন অপহৃত হন। এর তিন দিন পর ৩০ ও ৩১ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ওই সাতজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই অপহরণ ও হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এই ২৬ জনের মধ্যে নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে নূর হোসেনসহ কয়েকজন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। নূর হোসেন এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।