অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের অরাজকতায় ঝরে যায় অনেক প্রাণ পঙ্গু হয় নিরপরাধ নারী-পুরুষ

নারায়নগঞ্জ বার্তা ২৪ : গেল বছর দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরোধে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থেকে তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে নাশকতামূলক আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দেন। ৫ জানুয়ারি কার্যালয়ে বসেই তিনি ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে অবরোধ-কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। টানা ৩ মাসের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল পালন করতে গিয়ে পেট্রোলবোমাসহ নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ৯২ দিন পর তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফেরেন। এর মধ্যে ঝরে যায় অনেক প্রাণ। পঙ্গু হয়ে যায় শত শত নিরপরাধ নারী-পুরুষ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথমবার্ষিকীর দিন অর্থাৎ গেল বছর ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে বিএনপি জোট আন্দোলনের নামে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ অশান্ত করতে চায় এমন পূর্বাভাস পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও বুঝতে পারেন তাদের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। ৩ জানুয়ারি রাতে গুলশানের বাসা ছেড়ে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৫০ নেতাকর্মী। ৩ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার কাছে খবর আসে নয়াপল্টন অফিসে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর শুনে তিনি গুলশান কার্যালয় থেকে নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এদিকে কর্মসূচী পালনে বাধা ও খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করে ৫ জানুয়ারি দিনভর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, যানবাহন ভাংচুর, হামলা এবং পুলিশ ও সরকারী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়াপল্টন যেতে চাইলে পুলিশ ওই কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একপর্যায়ে খালেদা জিয়া গাড়িতে ওঠে বসেন। তার গাড়ি গেটের কাছে গিয়ে হর্ন বাজাতে থাকলেও পুলিশ তালা খুলে না দেয়ায় তার সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে গেটে জোরে জোরে লাথি মারতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক মনে করে এ সময় পুলিশ তাদের দিকে পিপার স্প্রে ছুড়ে মারেন। ৫ জানুয়ারি বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে দেশব্যাপী টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত কর্মসূচী পালন করতে দেয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত অবরোধ চলবে। অবশ্য টানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে ৫ এপ্রিল আদালতে হাজিরা দিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় চলে গেলেও এখন পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচী স্থগিতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। অবশ্য গতবছর ২৫ এপ্রিল গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অবরোধ আর এখন কার্যকর নেই’। পরে এ আন্দোলন ও বিএনপির রাজনীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে গতবছর ২৯ অক্টোবর দল থেকে পদত্যাগ করেন টানা অবরোধের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। এদিকে ৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পেট্রোল বোমাসহ ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শুরু করা হয়। আর প্রতিদিন বিএনপি নেতারা অজ্ঞাত স্থান থেকে গায়েবানা বিবৃতি দিয়ে আন্দোলন সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। টানা অবরোধ চলাকালে ১৩ জানুয়ারি গুলশান-২ নম্বরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর গুলিবর্ষণ ও তার গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর প্রতিবাদে পরদিন সারাদেশে হরতাল পালন করে বিএনপি জোট। এ ঘটনার পর মামলা হলেও এ নিয়ে রিয়াজ রহমান বা বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে না। অবশ্য রিয়াজ রহমান মাঝে মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলেও দলের অধিকাংশ কর্মসূচীতেই অনুপস্থিত থাকেন। টানা ৯২ দিনের অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে গতবছর ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান বিএনপি চেয়ারপার্সনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। ওই রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র শোকে কাতর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশান কার্যালয়ের সামনে গেলেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আগেই খালেদা জিয়া একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে অবস্থান নেন। আর ওই কক্ষের বাইরে অবস্থান করা বিএনপি নেতারা গেট খুলে প্রধানমন্ত্রীকে গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ দেননি। তাই কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে গণভবনে চলে যান। গত বছর ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে না দেয়ার ঘোষণা শোনার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যেকোন মূল্যে জনসভা করা হবে। এমনকি এমনও বলা হয়েছিল খালেদা জিয়া জনসভার উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে বের হবেন এবং যেখানে বাধা দেয়া হয় সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এ অবস্থান থেকে পিছু হটে বিএনপি জোট সেদিন গাজীপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় সেদিনের হরতাল ফ্লপ হয়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেও মাঠে নামেনি দলের নেতাকর্মীরা। যে কারণে এ হরতালটিও সুপার ফ্লপ হয়। এতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে গেলে ৩১ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করে নেতাকর্মীদের হতাশামুক্ত করার কৌশল নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু ৭ দফা ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে না পেরে তিনি যেকোন মূল্যে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচী সফল করার কৌশল নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ জানুয়ারির কর্মসূচী পালন করতে না পেরে ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচী পালন করে বিএনপি জোট। আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মারে শত শত মানুষ।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত