নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচার হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ত্বকী হত্যার বিচার চাচ্ছি আমরা আজকে ৬ বছর হয়ে যাচ্ছে। জানিনা আমাদের আর কতদিন এভাবে বিচার চাইতে হবে। যত প্রভাবশালীই হোক না কেন? প্রশাসন, রাজনীতিক থেকে সারা বাংলাদেশের সবাই জানে এই হত্যাকান্ডকে সংগঠিত হয়েছে, কাদের দ্বারা হয়েছে? কিন্তু কেন, কি কারণে, কার অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে এ হত্যাকান্ডের বিচার হচ্ছে না তা জানার অধিকার আমাদের সবার আছে।
৬ মার্চ বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৬ বছর উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের উদ্যোগে নগরীর দেওভোগে শেখ রাসেল নগর পার্কে শিশু সমাবেশ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে ত্বকীর বাবা থেমে যায়নি, আমরা থেমেও যাইনি। ত্বকী হত্যার বিচার চাচ্ছি আমরা আজকে ৬ বছর হয়ে যাচ্ছে। জানিনা আমাদের আর কতদিন এভাবে বিচার চাইতে হবে। ত্বকী হত্যাকান্ড আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসী এখন আর ভয় পায় না। মানুষ প্রশাসনের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে চায়। এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জবাসী এভাবেই বিচার চাইবে। পাশাপাশি চঞ্চল, আশিক হত্যার বিচার চাই। সবগুলো হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে একটি পরিবার দ্বারা। অবিলম্বে এহত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ অন্য আরেকটি ভুখ- মনে হয়, এখানে নির্বিচারে হত্যা করা হবে, অত্যাচার, অবিচার করা হবে। কিন্তু বলার কেউ নাই। আশিক, চঞ্চল, লিপি হত্যার বিচার হলে ব্যবসায়ী বুলু হত্যা হয়তো হতোনা। শেষ পর্যন্ত আমাদের ছোট সন্তানকে হারাতে হলো। কেন? একের পর এক হত্যাকান্ড হওয়ার পরও যখন এই শহরের মানুষ স্বোচ্চার, তখন তারা বেঁছে নিলো ছোট্ট একটি শিশুকে হত্যা করে তাদের পিতা-মাতাসহ সকলকে চুপ দেখানোর জন্য। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসী চুপতো হয়নি বরং ওই খুনিদের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করবো এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচার করা হোক।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা ও শিল্পী অশোক কর্মকার, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন এ সময় বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, নাগরিক কমিটি নারায়নগঞ্জ জেলার সভাপতি এবি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, প্রদীপ ঘোষ বাবু, জাহিদুল হক দিপু, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনি সুপান্ত প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করেন। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শতাধিক শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও এর আগে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৬ বছর উপলক্ষে কর্মসূচির প্রথম দিনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে নয়টায় সিরাজ শাহার আস্তানা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জে ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ মাহফিলের পূর্বে ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নাসিক মেয়র আইভী, ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, সদস্য সচিব, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, ত্বকীর ছোট ভাই রাকিব মুহাম্মদ সাকি, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী নারায়ণগঞ্জ, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি, সমমানা, শহুরে গায়েন, খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ জেলা, প্রগতি লেখক সংঘ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ।