নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ভোগ্যপণ্য হিসেবে স্ত্রীকে সীমাহীন শারীরিক ও মানসিক বর্বর অত্যাচারের পর অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে নুরে আলম নামে এক মাদকসেবী। আদালতের নির্দেশে ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বন্দর থানা পুলিশ। পরে শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি মোকাম বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত আস্বামী নুরে আলম কে গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি করে। যার মামলা নং ৩০৮/২০১৭। গ্রেপ্তারকৃত নুরে আলম নরসিংদীর শিবপুরের যশর উত্তরপাড়া এলাকার মৃত. আহাম্মদ আলী ও ফিরোজা বেগমের ছোট ছেলে। সে নারায়ণগঞ্জের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০১ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরিরত মো. হাসান আলীর ছোট মেয়ে সৈয়দা হামিদা হাসান পলি(৩১)কে ভালবেসে বিয়ে করেন নুরে আলম(৩৯)। এরই মধ্যে তাদের সংসারে আসে নুরে হানজালা পিয়াস(১৩) নামে এক ছেলে সন্তান। এদিকে বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় স্ত্রীর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে মাদকসেবী নুরে আলম। এরই প্রেক্ষিতে স্ত্রী পলি তার পরিবারের লোকজনের থেকে কয়েক দফায় তাকে প্রায় দেড় লক্ষ্য টাকা এনে দেয়। কিন্তু দিন দিন যৌতুকের চাহিদা বাড়তে থাকে তার। বিশেষ করে স্ত্রী ও শশুরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি পাওয়ার পর থেকে বেড়ে যায় অত্যাচারের মাত্রা ও ধরন।
প্রতিদিন ইয়াবা ও গাঁজা সেবন, একের পর এক নারী কেলেঙ্কারীতে জরিত ও যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নানাভাবে পৈশাচিক ও আদিম উপায়ে নির্যাতন শুরু করে নুরে আলম। যার ফলে কয়েকবার পলিকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া একাধিকবার স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণ্যমান্যরা বিচার-শালিসের মাধ্যমে নুরে আলমকে হুশিয়ার করেন বলে জানায় পলি ও তার পরিবার। এরই মধ্যে পূণরায় ৫ লক্ষ্য টাকা যৌতুক এর দাবীতে উৎপীড়ন বাড়িয়ে দেয়ার এক পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে ঘৃণ্য নাটক সাজিয়ে স্ত্রী পলিকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে মাদকসেবী স্বামী। ফলে মীমাংসার সকল চেষ্টা বিফলে যাওয়ায় গত অক্টোবর নির্যাতিতা স্ত্রী পলি ও তার পরিবার আদালতের দারস্থ হন।
তবে পলী ও তার পরিবার বরাবরই বিষয়টিকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং সে তার নিজেকে নির্দোষ দাবী করে হাতে থাকা যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। যা সময় মতো আদালতে প্রদান করবেন বলে জানান। এরই মধ্যে মামলা চলাকালীন প্রায় ১ মাস আগে নুরে আলম প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় এবং প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে নরসিংদীর এক মেয়েকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে সংসার শুরু করে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসামী নুরে আলমকে আদালত থেকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।