সোনারগাঁয়ে আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষে নিহত ১, নারীসহ জখম ৩০

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সোনারগাঁ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে সমর আলী (৪৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন।

আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন।

ঘটনার পর ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে সোনারগাঁ থানা, নারায়ণগঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে দফায় দফায় সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও শিশুসহ ৩০ জন আহত  হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে উভয় পক্ষের দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের হাজী আলাউদ্দিনের আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দ্বন্ধ চলে আসছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে কামাল, গোলজার, বাদল, আরিফসহ ২০-২৫জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র, রামদা, বল্লম, ছেনা, চাপাতি, লোহার রডে সজ্জিত হয়ে ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লার দোকানে হামলা চালায়। হামলায় সাদেকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা বরজাহান, রেখা, তাসলিমা, সায়বা, জাবেদ, জিসানসহ ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার সময় সাদেকুর রহমানের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সাদেকুর রহমানের লোকজন দেশীয় অন্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে আলাউদ্দিন পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী, জাহিদুল ইসলাম, মাহিলউদ্দিন, মোশারফ, নুর নবী, নিলা, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আলীসহ ৮ জন, সাদেক পক্ষের  খোরশেদ আলম, সাইদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম,  বিপ্লব, সুমন, শাকিল, মাহফুজ, ছোট সুমনসহ ১২ জন আহত হয়। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ চলছে। কয়েকদিন পর পর এ এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত কোরবানী ঈদের আগের দিনও তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় মহিলাসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছিল।

এ দুই পক্ষের জন্য সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে পুলিশ সদস্য হওয়ার কারনে তিনি প্রভাব বিস্তার করে এলাকার লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছেন।

সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লার স্ত্রী শেফালী বেগমের অভিযোগ, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীর দোকানে ৩০-৩৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। আলাউদ্দিনের নির্দেশে হত্যার উদ্দেশ্য বাদল, ইয়ানবি, মঞ্জুর, সমর আলী কুপিয়ে জখম করে। এছাড়াও আমাদের লোকজনের দোকান ও বাড়ি ঘরে শুক্রবার ও শনিবার সকালে দুই দফায় বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর করে। আমাদের প্রায়২০-২২জনকে কুপিয়ে আহত করে।

অভিযুক্ত আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা অশৃঙ্খল লোক। আমার আত্মীয় সমর আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। শুক্রবার রাতে আমি বাড়ি ফেরার সময় আমার উপর পুনরায় তারা হামলা করে। শনিবারও আমাদের লোকজনের বাড়ি ঘর ও দোকান ভাংচুর করে।

সোনারগাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে আটক করা হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত