নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডে বকেয়া পাওনার দাবিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ- শ্রমিক ও সাংবাদিকসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। আজ ১২ই জুন শনিবার সকাল ৭টা থেকে আদমজী ইপিজেডের সামনে কুনতুং এ্যাপারেলস লিঃ (ফ্যাশন সিটি) নামে একটি পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা বকেয়া পাওয়ানার দাবিতে সড়কে অবস্থান নিলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কের উপর আগুন জ্বালিয়ে নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাংরোড সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ৪ ঘন্টা ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে করে দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী ও সাধারণ যাত্রী। পুলিশের উপস্থিতিতে বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে থাকে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, মালিক পক্ষের দেওয়া সময় অনুযায়ী শনিবার সকাল ৭ টায় আদমজী ইপিজেডের প্রধান গেইটের সামনে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাং রোড সড়কে অবস্থান নেয় প্রায় ২ শতাধিক পোশাক শ্রমিক। শ্রমিকদের অভিযোগ, এ সময় ইপিজেডে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ করে। প্রায়ই শ্রমিকদের সাথে আনসার সদস্যরা অশালীন আচরণ ও নির্যাতন করে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। বেপজার কর্মকর্তারা কারখানা মালিক পক্ষের হয়ে কাজ করে। বেপজা-পুলিশ কারও কাছেই তারা বিচার পায় না।
পরে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কের উপর আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী ও সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলনরত শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের কথা মেনে না নিয়ে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও আনসারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি চলে লাঠিচার্জ এতে পুলিশ ও সাংবাদকিসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। পরে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। পরে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ।
আন্দোলনে অংশ নেয়া পোশাক শ্রমিক রিনা আক্তার জানান, ৬ বছর তিনি ওই কারখানায় কাজ করেছেন। কিন্তু এখনো তার বকেয়া পাওনা পরেশিাধ করেনি মালিক পক্ষ। ৬ বছরে প্রায় ২ লক্ষ টাকা জমেছে বলে ওই নারীর শ্রমিকের দাবি। তানিয়া নামে আরেক শ্রমিক জানায়, ৯ বছরে তারও প্রায় ২ লাখের বেশি টাকা জমেছে।
নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশের ওসি (ইন্টেলিজেন্ট) শেখ বশির আহম্মেদ জানান, ইপিজেডের কুনতুং অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শনিবার সকালে তারা তাদের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে ইপিজেড এলাকায় জড়ো হয়। সকাল ৮ টার দিকে তারা বিক্ষোভ করার পাশাপাশি ইপিজেড ও নারায়ণগঞ্জ শিমরাইল সড়ক অবরোধ করে রাখে। এক পর্যায়ে সড়কের উপর আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরানোর কয়েক দফা চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোঁড়া ইট পাটকেলে কেউ আহত হয়নি। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে।
সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জানান, শ্রমিকরা জানিয়েছে মালিকপক্ষ তাদেরকে বারবার সময় দিয়েও পাওনা পরিশোধ করছেন না। শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মোঃ মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে এবং ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। অবস্থার বেগতিক দেখে পুলিশ ১২ রাউন্ড শর্টগান গুলি ছোড়ে এবং ১১টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় আসলে যান চলাচল স্বাভাবিক শুরু হয়। তবে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষ কিছুই জানায়নি।
এ বিষয়ে বেপজার জিএম আহসান কবির জানান, আদমজী ইপিজেড এ অবস্থিত ফ্যাশন সিটির মালিকপক্ষ কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছেন। তবে তারা কবে কখন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবেন তার কোন নির্দিষ্ট তারিখ জানান নেই।