নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত নেতাকর্মীরা। কিন্তু সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটিতে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের নেই তেমন কোন প্রচারণা। দেখা মিলছেনা এক্যফ্রন্টের মনোনিত র্প্রাথী মুফতি মনির হোসেন কাশেমীর পাশে বিএনপির শীর্ষ নেতা কর্মীদেরকেও।
অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনিত হেভিওয়েট প্রার্থী এ.কে.এম শামীম ওসমান। যিনি ইতোমধ্যেই ব্যপক প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। তার পাশে রয়েছেন বিশাল নেতাকর্মীদের সর্মথনও। তাই হেভিওয়েট ওই প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে স্ত্রী ও সন্তান সহ স্থানীয় প্রতিটি থানা, ওয়ার্ডের নেতাকর্মীকে।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ২টি আসন বিএনপির সাথে জোটভুক্ত দলের নেতারা প্রার্থীতা পাওয়ায় এনিয়ে ক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে বেশ কিছু নেতারা বৃহৎ স্বার্থে এস.এম আকরাম ও মনির কাশেমীর পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও মনির কাশেমীর পক্ষে র্শীষ নেতাদের মাঠে অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। তবে মাইকে প্রচার ও পোষ্টারিং, লিফলেট বিতরণ শুরু হয়েছে বেশ কিছু স্থানে।
এদিকে মনির কাশেমীর নিজ উদ্যোগে একাধিকবার বৈঠক করেও বিএনপি র্শীষ নেতাদের কোন সাড়া পাচ্ছেনা।
শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাসদাইর শের-এ বাংলা রোডে তৈমূর আলম খন্দকারের সাথে বৈঠক করেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুফতি মনীর হোসাইন কাসেমী। ওই সময় তৈমূর আলম খন্দকার কাসেমীকে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, আপনি তো আমাদের দলের প্রার্থী নন। আপনাকে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমরা দলের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই নামবো।
এরআগে কাশেমী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের সাথেও বৈঠক করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত তাদের কাউকেই পাশে দেখা যায়নি। এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী পক্ষে প্রচারণাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে না নেমে সাত খুন মামলার আসামী নুর হোসেন ভাই নুরুদ্দিনকে নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, তিনি জোটের প্রার্থী আমাদের দলের নয়। তিনি সবার সাথে কথা বলছেন। চা খাচ্ছেন। পরিচিত হচ্ছেন। নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থী দিয়ে দল নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে কাজ করার। তৃণমূল সে ভাবেই কাজ করবে। দলীয় ভাবে মিটিং করারও কিছু নেই। আমরা এখনও নামি নি। তবে সামনে নামবো।
উল্লেখ্য, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ দুইটি থানা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। শিল্প কারখানা ও জনবহুল এলাকা হিসেবে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট যুদ্ধে লড়াই করবেন এক্যফ্রন্টের মনোনিত র্প্রাথী মনির কাশেমী। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনিত হেভিওয়েট প্রার্থী এ.কে.এম শামীম ওসমান। মুফতি মনির হোসেন কাসেমী ফতুল্লার এনায়েতনগরের মুসলিমনগর এলাকার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম আব্দুল বারেক। ছেলে বেলায় ১৯৭৮ সালে দেওভোগ মাদ্রাসায় তার লেখাপড়া শুরু। ১৯৮৬ সালে তিনি লেখা পড়া করেন আমলাপাড়া মাদ্রসায়। পরে সেখান থেকে তিনি লেখা পড়া করার জন্য ছুটে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রসায়।
লেখাপড়া শেষে তিনি ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৩ সালে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করেন। একই সালে তিনি সৌদি আরবের রাজ পরিবারের ঈমাম ও রাজ ভান্ডারের কোষাগারের হিসাব রক্ষনের দায়িত্বও তিনি দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। এরই মধ্যে মনির হোসেন কাশেমী সৌদি আরবের রিয়াদে থেকেই জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন। রিয়াদে তিনি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। অপরদিকে ২০৯ সালের নভেম্বরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ২০১৫সালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের তিনি অর্থ সম্পাদক হিসিবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি একই সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব হিসিবে কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ।
বিএনপির জোটে ২৩ দলের মধ্যে একটি জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। জোটে আসার পর বিএনপির সাথে বেশ কয়েকটি আসন নিয়ে কথা হয়েছিল দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাবৃন্দের। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে গিয়াস উদ্দিন অথবা শাহ আলম,এই দুইয়ের মধ্যেই আলোচনা ছিল নেতা কর্মীদের। তবে হঠাৎ করেই মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী করায় এই আসনের সাধারণ জনগনের মধ্যে তাকে নিয়ে চলছে নানা কৌতুহল। অন্য কোন কারণ নয়, জোটের জন্যই বিএনপিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থীর হাতে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। শেষ পর্যন্ত মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ কতোটা সহযোগীতা করবেন তা দেখতে আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে সবার।