লক্ষী নারায়ণ কটন মিলে আধার পল্লীতেই পূজা উদযাপন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। দূর্গাপুজাকে সামনে রেখে জেলার পতিটি মন্ডপে রাতদিন পরিশ্রম করে চলছে প্রতিমাকে মনের আল্পনা ও শাড়ি অলংকার দিয়ে সাজানোর শেষ মুহুর্তের কাজ। তবে প্রভাবশালী মহলের কারণে চাইলেও এই আনন্দেও উৎসবের আমেজ নেই লক্ষী নারায়ণ কটন মিলে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। পুরো মিল জুড়ে বিদুৎ না থাকায় আধারেই জীবন কাটাচ্ছে এখানকার ৫৪টি পরিবার। তাই আধার পল্লীতেই উদযাপন করা হবে লক্ষী নারায়ণ কটন মিলে শারদীয় দূর্গা পূজা।

তাদের অভিযোগ, সবচেয়ে বড় এই উৎসবটি পালনে স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীদের মাঝে অনেক আগ্রহ থাকলেও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার কারণে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় তাদের মন্ডপে যাওয়ার প্রবেশ পথ। এতে করে ওই পুজা মন্ডপের আশপাশ অযতেœ অবহেলায় পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। শুধুমাত্র অনুমতি দিলেই দূর্গা উৎসবের আগ মুহুর্তে খুলে দেয়া হয় সেই মন্ডপ। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে এ নিয়ে কোন কার্যকর ভূমিকা নেই পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের।

এ বিষয়ে ময়না রানি দেঁ নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ৬৫ বছর এখানে মন্ডপে আমরা দুর্গা উৎসব পালন করেছি। এখানেই পাল এসে প্রতিমা তৈরী করতো, এখন বাহির থেকে তৈরী করে নিয়ে আসতে হয়। বিগত ৫ বছর যাবত এই মন্ডপে আমরা শুধু উৎসবের আগেই প্রবেশ করতে পারছি। যেকারণে মন্ডপের স্থানটি একটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। যদি আগে থেকে খুলে দেয়া হতো আমরা পরিষ্কার রাখতে পারতাম। আমাদের নাতি-নাতনিরা উৎসবটিকে ভালোবভাবে পালন করতে পারতো। আমরা পূজা উদযাপন কমিটিকে আগে অনেক জানিয়েছি কার্যকর কোন ভূমিকা তারা পালন করেনা।

জানা গেছে,  নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলসে শেয়ারহোল্ডারদের বিরাজ করছে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। ১৮ একর ৬৫ শতাংশের উপর গড়ে ওঠা শতবছরের পুরনো এই মিলটি ধুঁকছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। নিট কনসার্নের মালিকদের নামমাত্র মূল্যে মিলটি কেনার চেষ্টায় মিলটিতে হয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। মিলটি দখলে নিতে হাইকোর্টের নির্দেশের কোন তোয়াক্কাই করেনি তারা। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার শ্রমিকদের মালিক বানানোর উদ্দেশ্যে মিলটি প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে হস্তান্তর করে। তবে ২০১১ সাল থেকে মিলটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে নিট কনসার্ন গ্রুপের কর্নধাররা। ২০১৩ সালের গত ২৪ জুন মিলের শেয়ারহোল্ডার নিধু কমল দে গং এর এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে মিলের স্থাবর ও অস্থাবর সকল ধরনের সম্পদ স্থানান্তর বা হস্তান্তরে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। একই সঙ্গে নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ কেন বে-আইনী হবে না তা জানতে চেয়ে রুল নিশি জারি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

এরপর দেলোয়ার হোসেন গং ২০১৪ সালের জানুয়ারীতেও আরো একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। তবে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক মনির হোসেন মোল্লা ওরফে মনার নেতৃত্বে ক্যাডার বাহিনী মিলটি দখলে নিতে একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। মিলের শেয়ারহোল্ডারদের কলোনীর বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মিলের পরিচালনা পর্ষদ। শেয়ারহোল্ডারদের বিতাড়িত করতে মিলের ভেতরে একাধিকবার অস্ত্রের ঝনঝনানিও হয়। হামলা, মামলা, নির্যাতনে তাড়াতে ব্যর্থ হয়ে কলোনীতে আগুনও লাগিয়ে দেয়া হয়। শেয়ারহোল্ডারদের দাবি, অবৈধ পরিচালনা পর্ষদের লোকজন মিলটির ভবনগুলো ভেঙ্গে গোটা এলাকাটি বিরানভূমিতে পরিণত করে চলেছে। ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের মিলটি মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে নিট কনসার্ন গ্রুপ।

মিলের শেয়ার হোল্ডার ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর নামে অরেকজন বৃদ্ধ বলেন, আমরা এখানে মানুষ হয়েও পশুর মত বসবাস করে যাচ্ছি। সঠিক সময়ে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করার পরেও আমাদের এখানে নেই বিদ্যুৎ, নেই গ্যাস সংযোগ। আমাদেও তাড়াতে পানির লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।  আমরা প্রভাবশালীদের দখল থেকে মুক্ত হতে চাই। শুধু হিন্দুরাই কষ্টে নেই, লক্ষী  নারায়ণ কটন মিলের সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এখানে অর্ধশত পরিবারই সুবিধাবঞ্চিত।

এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, আমরা প্রতিবছরই তাদের মন্ডপের গেইট খুলে দেয়া সহ সবকিছুই করে থাকি। এবছর তারা আমাদের কাছে আসেনি। তাহলে আমরা কিভাবে কি করবো। এরআগে আমরা নিট কনর্সানের সাথে বসে এ বিষয়টির জন্য কথা বলেছি। গেইট খুলে দেয়া, পূজা করতে দেয়া সহ সব বিষয়ে নিট কনর্সানের জয়নাল সাহেব আমাদের সহযোগীতা করেছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ বছর জানায়নি তারা কি পজিশনে আছে। তাই জানিনা কি অবস্থায় আছে। তাহলে কিভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখবো।

এ বিষয়ে কথা বললে নিট কনর্সানের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা বলেন, তাদের ধর্ম তারা পালন করবে, এতে তো আমার কোন সমস্যা নেই। আমি ১৫ দিন আগেই গেইট খুলে দেয়ার জন্য বলে দিয়েছি। আর তাছাড়া তাদের এই উৎসব পালনে যেন কোন সমস্যা না হয়। এজন্য আমার সেচ্ছা সেবক কর্মীরাও থাকবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত