নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি, দুলাল ) : দেশে করোনার সংক্রমন ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১লা জুলাই থেকে কঠোরভাবে লকডাউন পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। সরকারের এমন ঘোষণায় মানুষের মাঝে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউন আরও বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় শিল্পকারখানা বেষ্টিত রূপগঞ্জ ছাড়তে শুরু করেছে অনেকে। দূরপাল্লার বাস না চললেও মাইক্রোবাস, সিএনজি, পিকআপ, লেগুনা, অটোরিক্সা আবার অনেকে পাঠাও দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌছতে শুরু করেছে।
আসন্ন ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে ও অনিশ্চিত লকডাউনের শঙ্কায় মানুষজন বাড়িতে আপন জনের কাছে ফিরতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম পর্যায়ের লকডাউনের ৭ম দিনে রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা গাউছিয়া এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের প্রচন্ড ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
জানা যায়, করোনা সংক্রমন রোধে সরকার দ্বিতীয় ধাপে ১লা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন ঘোণনা করেছে। এই ঘোষণায় ঘরমুখী মানুষের মাঝে আংতক বিরাজ করছে। অনেকে চাকুরী হারানোর ভয় করছে আবার অনেকে ঈদে বাড়ি না যাওয়ার আতংকে রয়েছে। এমন শঙ্কায় অনেক চাকুরিজীবি তাদের পরিবার পরিজনকে দেশের বাড়িতে পাঠাতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভূলতা, গোলাকান্দাইলে পুলিশের তৎপরতায় গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি, লেগুনা, অটোরিক্সা বা পাঠাওতে করে কোন রকম লকডাউনের আওতাভূক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা পেরিয়ে গেলেই অদূরে নরসিংদী জেলায় পৌছতে পারলেই বাজিমাত।
এদিকে, ঢাকায় লকডাউন না থাকায় যেকোন ভাবে যাত্রীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিক্রম করছে। তাহলেই তাদের বাড়িতে যাওয়ার আর কোন ভয় নাই। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট গাড়িগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, বাসের তিনগুন ভাড়া নিচ্ছে মাইক্রোবাস। পিকআপে কিছুটা কম হলেও প্রাইভেটকারে আরও বেশী। এদিকে পাঠাও ও সিএনজি দ্বিগুন ভাড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পাড় করে দিচ্ছে। রিক্সা যেগে যেখানে ২৫ টাকা ভাড়া সেখানে ১শ টাকায় রূপগঞ্জ অতিক্রম করছে বিপাকে পড়া যাত্রীগণ। আবার বাড়তি ভাড়া দিতে না পারায় অনেকে পায়ে হেটে নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিক্রম করছে। এভাবে যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
রংপুর থেকে রূপগঞ্জে এসেছেন রুস্তম আলী। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামটেক গার্মেন্টস লিমিটেডে ডাইং সেকশনে চাকুরী করেন। পরিবার নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার সাওঘাট এলাকায় বসবাস করলেও প্রতি ঈদে তিনি পরিবার নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঈদ উৎযাপন করেন। তিনি বলেন, সামনে কঠোর লকডাউন। সবকিছু নাকি বন্ধ থাকবে। তাই আগেভাগেই পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। দ্বিগুন ভাড়ায় মাইক্রোবাস ভাড়া করেছি। এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক হয়ে ঢাকা গাজীপুর যেতে পারলে আর কোন ভয় নাই। ছুটি হলে আমি কোনভাবে চলে যাব।
আহাদ মিয়া গাউছিয়া এলাকায় চা বিক্রি করেন। জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ হলেও ১৬ বছর যাবত গোলাকান্দাইল এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। গাউছিয়া ফ্লাইওভারের নীচে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হুনতাছি সরকার সবকিছু বদ্দ (বন্ধ) কইরা দিতাছে, মার্কেট বদ্দ অইয়া গেলে আমার চায়ের দোহানে কেডা আইব চা খাইতে। ব্যবসা না অইলে বাড়ি ভাড়া কেমনে দিমু। হোলাহানগো ইস্কুল কবে বদ্দ অইয়া গেছে। হের লাইগা দোহান বদ্দ কইরা বাড়ি যাইতাছি। দেশ বালা অইলে আবার আমু।
রূপগঞ্জের ভূলতা গাউছিয়া ঢাকা-সিলেট মহা সড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের সংযোগস্থল হওয়ায় এখান থেকে সারা দেশে সহজেই যাতায়াত করা যায়। তাই গতকাল গাউছিয়ার চিত্র ছিল পুরুটাই অন্যরকম। এদিকে থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের তৎপরতায় যাত্রীবাহী কোন বাস দেখা না গেলেও পিকআপ ও মাইক্রোবাসে চড়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় রূপগঞ্জ ছাড়তে দেখা গেছে। কঠোর লকডাউনের ভয়ে রূপগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ঘরমুখী মানুষ গোলাকান্দাইল মোড়ে ঝটলার সৃষ্টি করে। উপায়ান্তর না পেয়ে অনেক যাত্রী পায়ে হেটে গন্তব্যস্থলের দিকে রৌওনা দেয়।
যারা রূপগঞ্জ ছাড়ছেন তাদের অনেকে প্রতিবেদককে জানান, দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউন সহসাই সিথিল হবে কিনা এ নিয়ে জনমনে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কঠোর লকডাউনে কর্মস্থল বন্ধ হয়ে যেতে পারে আবার অনেকে চাকুরীচ্যুত হতে পারে। আসছে ঈদে বাড়ি যাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগাম বাড়ি যেতে রৌওনা করেছে। আবার অনেকে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনের খবরে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে রূপগঞ্জ ছাড়ছেন।