রঙ তুলির আঁচড়ে সাজছে প্রতিমা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪  ( সৈয়দ সিফাত  আল রহমান লিংকন  ) : শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমার রুপ। শিল্পীদের নিপুন হাতে ইতোমধ্যে মাটির কাজ শেষ করে চলছে রঙ তুলির কাজ। তাদের রঙ তুলির আঁচড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দুর্গাসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমূর্তী।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতি বছর অশ্বরের বিনাশ কল্পে দেবী দূর্গা এই ধরাধামে আবির্ভুত হয়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার গ্লানি দূর করার জন্যই এই পূজার আয়োজন ।

শারদীয় দুর্গা পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সর্ববৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকী থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দরজায় কড়া নাড়ছে দেবী দুর্গার আগমণী বার্তা। ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দুর্গা প্রতিমাকে এখন সাজাতে রং তুলির পরে কাপড় ও অলংকারে পরিপূর্ণ রূপ দিতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছে।

এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও উদযাপিত হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবাচাইতে বড় উৎসব দুর্গা পুজা। জেলায় ২০৩ টি মন্ডপ রয়েছে। আর শহরে সদরের আওতাধীন ৩৩টি মন্ডপ রয়েছে। আর এ পুজাকে কেন্দ্র করে সকল মন্ডপেই প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের গলাচিপা রামকানাই আখরা মন্দির, কুড়িপাড়া মন্দির, পালপাড়া, আমলাপাড়া, নন্দিপাড়া, শাহা পাড়া, বিভিন্ন মন্ডপে ছোট বড় সব ধরণের প্রতিমা শোভা পাচ্ছে। কাদা-মাটি, বড়-কাঠ দিয়ে প্রতিমা তৈরী শেষে রংয়ের আঁচড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান রামকানাই আখরা মন্দিরের মৃৎ শিল্পী প্রাণ গোপাল ও তার ভাতিজা ।

মৃৎ শিল্পী প্রধান প্রাণ গোপাল জানায়, সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে করে প্রতিমার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে দিতে পারেন। প্রতি বছরেই তারা এই কাজের মাধ্যমেই উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এ পেশা ছাড়া তারা আর অন্য কোন পেশায় জড়িত নয়। তাদের র্পূব পুরুষেরাও এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

মৃৎ শিল্পী আরো জানায়, প্রতি বছরে যাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে তাদের কাজ আমরা করি। আর যাদের লেনদেন ভালো না। তাদের কাজ ছেড়ে আমরা অন্যদের চুক্তি করে সময় দেই। প্রতিটি মূর্তি তৈরীতে প্রায় ৬ মাস সময় লেগে থাকে। আমরা খর ও মাটিতে মূর্তি তৈরী করা শুরু থেকে শাড়ি অলংকারে সাজানোর শেষ পর্যন্ত কাজ করি।

এদিকে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেবী দুর্গাকে বরণ করতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখন তাদের শুধু অপেক্ষার পালা । এরই সুবাদে ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ উৎসব ও পুজার প্রস্ততি । ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পুজার্চনা, প্রসাদ বিতরন ও আরতিসহ পুজার নান আনুষাঙ্গিকতায় মেতে উঠবেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী ও শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৫ অক্টোবর অধিবাস, ১৬ অক্টোবর দেবীর সপ্তমীবিহিত, ১৭ অক্টোবর মহা অষ্টমীবিহিত, কুমারী পূজা,সন্ধিপূজা, ১৮ অক্টোবর দেবীর নবমীবিহিত এবং ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন এবং সন্ধ্যা আরতির পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা।

দুর্গা পূজার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন জানায়, কেন্দ্রর নির্দেশনা অনুযায়ী পূজা যেন সুষ্ঠু সুন্দর হয় সে ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবাইকে পূজা উদযাপনে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। আমরা মুসলমান, রাজনীতিবিদ দল-মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে এই উৎসব উদযাপন করতে চাই। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ সকলের সহযোগীতা কামনা করি।

add-content

আরও খবর

পঠিত