নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : নগরীর মাসদাইর শের এ বাংলা রোডের এন.এস টাওয়ারে কমিটি নিয়ে কোন্দলের খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ফ্লাট মালিক সমিতির আয়-ব্যায়ের লক্ষাধিক টাকার হিসাবে গড়মিলে আহ্বায়ক কমিটির দিকে আঙ্গুল তোলেছে ফ্লাট মালিকরা। এছাড়াও ফ্লাটের প্রকৃত মালিক না হয়েও সদস্য সচিবের পদ হাসিল করে সাবেক সহ-সভাপতি এবং ফ্লাট মালিকদের অনেককেই ভোটের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে কমিটির আহ্বায়ক ব্রজেন্দ্র নাথ ও সদস্য সচিব রাসেদ খানের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে ফ্লাট মালিক ও বিতর্কিতদের মধ্যে প্রায়শই মল্লযুদ্ধ চলছে। গতকালে সোমবার (১২ সেপ্টম্বর) দুপুরে ফ্লাট মালিকরা জড়ো হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে থাকা অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে একটি স্বারকলিপি তোলে ধরেন ফ্লাট মালিকরা।
এসময় সাবেক কমিটির সহ সভাপতি অহিদুল ইসলাম বলেন, আমি আগের কমিটিতে ছিলাম আমাকেই তারা বাদ দিয়েছেন। কিন্তু কেন বাদ দিলো কিছুই জানিনা। তারা আহ্বায়ক কমিটি স্বেচ্ছাচারিতা করছে। ফ্লাট মালিকদের কোনভাবেই যেন তারা তোয়াক্কা করছেনা। একজন সম্মানিত ফ্লাট মালিক হয়েও আমাদেরকে সমাজিকভাবে ও ফেসবুক সহ বিভিন্নভাবে ছোট করা হচ্ছে। এছাড়াও তারা যে কমিটিতে আছে। নির্বাচন দিবে। সকল পুরনো হিসাবের সচ্ছতাও রাখেনি। লক।স লক্ষ টাকা কিভাবে খরচ হয়েছিল তা বুঝিযে দেয়ার দায়িত্ব তো তাদের উপর বর্তায। মালিকদের নিয়ে তো এটা নিয়ে বসা দরকার ছিলো।এসব কমিটি কেন হয়, যেন ফ্লাটের সকল উন্নয়নে কমিটি পাশে থাকে।
শহিদুল ইসলাম বকুল নামে এন এস টাওয়ারের আরেকজন ফ্লাট মালিক ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কথা বলতেও লজ্জা করছে। একজন প্রকৃত মালিক হয়ে পাশাপাশি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা হয়ে আমাকে এসব নিয়ে বলতে হচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটি যে কাজটি করেছে তারা মোটেও ঠিক করেনি। আমরা তো এ নগরীর বাহিরের কেউ না। তারা যদি সুষ্ঠু সমাধানে না আসে কঠোর জবাব দেয়া হবে।
ফ্লাট মালিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, গত ২৫ জুন তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে উল্লেখিত ২ জন ছাড়াও কোষাদক্ষ্য পদে রযেছেন আব্দুর রউফ। পরবর্তিতে আরো ৩ জনকে যুক্ত করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির রূপ দেয়া হয়। তবে এসব বিষয়ে ফ্লাট মালিকদের সাথে তারা আলোচনা করেনি। তাছাড়া তড়িগড়ি করে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। যা ঝুলিয়ে দিয়েছে নোটিশ বোর্ডে। সে তালিকায় সাবেক কমিটির সহ সভাপতি অহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম বকুল, শিউলি আক্তার, ফারুক মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন ফ্লাট মালিকের নাম নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৃত ফ্লাট মালকিরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে আহ্বায়ক ব্রজেন্দ্র নাথ বলেন, আমাদের যে সংবিধান রয়েছে। সেভাবেই কাজ করেছি। আর এ তালিকায় কারো আপত্তি থাকলে বিবেচনা করে চুড়ান্ত করা হবে। আমরা এনওসি নিয়ে তালিকার প্রক্রিয়া করছি।
সংবিধানের বিষয়ে বা তালিকা থেকে বাদ দেয়া ও আয় ব্যায় সহ সকল বিষয়ে ফ্লাট মালিকদের নোটিশ করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেননি। এছাড়াও সদস্য সচিব রাসেদ খানের ব্যক্তি মালিকানা ফ্লাট কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসেদ খান আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন। এটা তখন যাচাই করা হয়নি।
এ বিষয়ে সদস্য সচিব রাসেদ খানকে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি। তাই তার কোন মন্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে ফ্লাট মালিকদের প্রস্তাবিত এক স্মারক লিপিতে এন এস টাওয়ার এর আয়-ব্যয় এর হিসাব প্রসঙ্গে প্রায় ৪০ জন ফ্লাট মালিকদের স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এন এস টাওয়ারের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য মালিকরা বিগত ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অনেক চরাই উৎরাই পার করে কমিটি দীর্ঘ ৬ বৎসর সুনামের সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। গত ০২ মাস আগে একটি এ জি এম করে আহব্বায়ক কমিটির কাছে দায়সারা হিসাব বুঝিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। পরে আর হিসাব সঠিক ভাবে বুঝে না পেয়ে সমস্ত ফ্লাট মালিকগন মনে করে এই দীর্ঘসময়ের পরিক্রমায় অনেক অনিয়ম ও দুর্নিতি হযে থাকতে পারে। তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন ও ভবনের সার্বিক সুবিধা আনয়নের লক্ষে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উল্লেখ করেন।
সেগুলো হলো : ১নং ভবনের ছাদ এ কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন। কার্যকরী পরিষদের মিটিং এ প্রথমবার ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় বার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এ জি এম এ কমিউনিটি সেন্টার নির্ধারনে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার হিসাব দেয়া হয়। সুতরাং বাকী ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কোন হিসাব পায়নি। ভবনের সকল কাজ সম্পাদনের জন্য ডেভেলপার এর কাছ থেকে ২য় তলা ৬৮০০ বর্গফুট হিসাবে ক্রয় করে নামজারি জমাভাগ ও খাজনা পরিশোধ করা হয়। তার হিসাব পওয়া যায়নি। গ্যাস কন্ট্রাক্টর মোবারক সাহেব ০৩ মাসের মধ্যে ভবনের তিতাস গ্যাস এর সংযোগ দিবে বলিয়া ডিজ এর মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন কিন্তু বছরের পর বছর চলিয়া গেছে গ্যাস সংযোগ দিতে পারে নাই। সেই টাকা উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা গ্রহন কেন করা হলো না কেন ডিড বা এগ্রিমেন্ট টি কাহার নিকট আছে তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা।লিফট বাবদ উঠানো সমস্ত টাকা কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে তা খরচের রশিদ সহ হিসাব উপস্থাপন করা। এজি এম এ খাবারের স্পন্সর বলা হয়েছিল তৎকালীন সভাপতি মনির আহম্মেদ কিন্তু পরে খরচের হিসাবে ৪০ হাজার ২শত টাকা খরচ দেখানো হয়। তাই এই খরচ এ জি এম এ পাশ করা হলোনা কেন এবং সমস্ত ফ্লাট এ খাবার পৌঁছানো হল না কেন তার জবাবদিহিতা।তাছাড়াও ফেসবুকে এ ফ্লাট মালিকদের নাম এ গ্রুপ খুলে প্রায়ই ফ্লাট মালিকদের অশালীন ও অকট্য ভাষা ব্যবহার করে বিভিন্ন পোষ্ট দেয়া হয় যা শোভনীয় নয়। এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করা।