ভূমিদস্যু থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযোদ্ধার সংবাদ সন্মেলন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : সিদ্ধিরগঞ্জের চাঁন মিয়ার নির্যাতন ও দখলবাজি থেকে রক্ষা পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ তিন ভুক্তভোগী। রবিবার (১৫ মার্চ) বেলা সাড়ে এগারটার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে  এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক। এ সময় তার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী সাদেকুর রহমান লাভলু এবং রফিকুল ইসলাম।

এনামুল হক বলেন, তিনি ১৯৮৯ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লায় এসে বসবাস শুরু করেন এবং ২০০৭ সালে জমি ক্রয় করে ২০০৯ সালে আইন মেনে তৎকালিন সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা থেকে প্ল্যান পাস করিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু তার বাড়ির প্ল্যান পাস করা নেই দাবি করে বিভিন্ন সময় হয়রানি করছেন চাঁন মিয়া। এমনকি আদালতেও এ সংক্রান্ত একটি মামলাও করেন। যদিও সে মামলাটি আদালতে প্রমাণ না হওয়াতে সেটি খারিজ হয়। পরবর্তীতে চাঁন মিয়া বিভিন্ন দপ্তরে একই সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন।

তিনি আরো বলেন, তিনি বাড়ি নির্মাণ করার সময় নিয়ম মোতাবেক চার ফুট জায়গা ছেড়ে বাড়ি করেন। সম্প্রতি তিনি তার বাড়ির জন্য একটি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করেন। এতে চাঁন মিয়া বাধা দেন এবং পাম্পটির উপর ঢালাই করে দেন। পরবর্তীতে পাম্প উত্তোলন করে মেরামত করতে চাইলেও চাঁন মিয়া বাধা দেন এবং আদালতে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। কিন্তু আদালত সেটি খারিজ করে দেন। এরপরও চাঁন মিয়া নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জানালে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পাম্প উত্তোলনে সহযোগিতা করেন।

মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক বলেন, তার বাড়ির সুবিধার্থে একটি রাস্তা তৈরি হয়। এ রাস্তায় তারও চারফুট জায়গা আছে। কিন্তু এই রাস্তা এবং তার বাড়িটি ভাঙ্গার জন্য চাঁন মিয়া বিভিন্ন রকমের চক্রান্ত শুরু করে। এমনকী আদালতের দ্বারস্থও হন চাঁন মিয়া। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে একজন সার্ভেয়ার এসে জমি মেপে রাস্তায় তার চারফুট জমি পেলেও চাঁন মিয়ার ক্রয় করা ৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ জমি পান এবং এই তথ্য তুলে ধরে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন টেন্ডারের মাধ্যমে ওই রাস্তাটির দক্ষিণ পাশ দিয়ে ড্রেন কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই কাজেও চান মিয়া বাধা দেন। তার বাউন্ডারি ওয়াল ভাঙলে মামলার হুমকি দেন। পরবর্তীতে ঠিকাদার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে ঝামেলা এড়ানোর জন্য চাঁন মিয়ার ওয়াল ছেড়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ড্রেন নির্মাণ শেষ হলে মূল রাস্তার কাজে ঢালাই করতে গেলে চাঁন মিয়া মুক্তিযোদ্ধার বিল্ডিং ভেঙে রাস্তা বড় করতে চান অন্যথায় রাস্তা করতে বাধা দেন। কিন্তু জনস্বার্থে যে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে সেটি বন্ধ করার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী জড়ো হলে চাঁন মিয়া সেখান থেকে পিছু হটেন এবং ঢালাই কাজ শেষ করেন।

তিনি জানান, রাস্তার ঢালাই শেষ হলে চাঁন মিয়া পুনরায় তার মটরের উপর আবারও ঢালাই করে তা বন্ধ করে দেন। এবং এর উপর ¯িপড ব্রেকার করে দেন। এ বিষয়টি সিটি করপোরেশন মেয়র ও জেলা প্রশাসককেও তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।

তিনি আরো বলেন, শুধু আমার বিল্ডিংই নয়, পাশের আরও কয়েকজনের বিল্ডিং চাঁন মিয়া ভাঙতে চান। এরমধ্যে ১২ মার্চ সাদেকুর রহমান লাভলু বাধা দিলে চাঁন মিয়া তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। চাঁন মিয়া একজন ভূমিদস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তিনি একজনের ১৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে। এ ঘটনায় ইব্রাহিম খলিল বাদল বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ মামলাও করেন। এছাড়াও চাঁন মিয়া এমন করে আরও অনেকের জমি দখল করে নিয়েছেন।

এনামুল হক বলেন, চাঁন মিয়া সামছুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ইটভাটার লেবার ও কখনো কখনো ঠিকাদারি কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। তিনি বিএনপির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে নিজেকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি চাঞ্চল্যকর আবু তালেব হত্যা মামলার আসামী। এছাড়াও চাঁন মিয়া জাগরণী নামে একটি ভুয়া টিভি চ্যানেল খুলে নিজেকে কখনো আবার এটির চেয়ারম্যান কখনো এটির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে বেড়ায়।

এদিকে চাঁন মিয়া দাবি করেছেন, তিনি কখনোই ইটভাটার লেবার ছিলেন না। ঠিকাদার ছিলেন। সে সব কাগজপত্রও তার আছে। ইব্রাহিম খলিলের মামলায় তিনি রায় পেয়েছেন। বর্তমানে খলিল হাইকোর্টে আপীল করেছেন। সে যদি আদালত থেকে রায় নিয়ে আসতে পারেন তবে আমি জমি ছেড়ে দিব। এই জমি আমার।

তিনি আরও দাবি করেছেন, আমি কখনো বিএনপি করিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। এরপর ব্যবসায় মন দিই। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। তবে কোনো পদপদবী নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত