বেড়েছে মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : যাদের নেই কোন রাজ্য, নেই সম্রাট কিংবা মাথায় পড়নে মুকুট। সমাজে তাদের ভালো অবস্থান তো দূরের কথা, বরং এদের কারণে ধ্বংসের পথে আমাদের সমাজ। মূলত এরা চিহ্নিত মাদক কারবারী হিসেবেই পরিচিত। তবে স্থানীয় মানুষের নামকরণ ও গণমাধ্যমের কল্যানে মুকুট না থাকলেও তাদের (পুরুষ) মাদক সম্রাট কিংবা (স্ত্রী হলে) সম্রাজ্ঞী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

ইদানিং বেড়েই চলছে এসব মুকুটহীন মাদক সম্রাজ্ঞীর সংখ্যা। এ জেলায় দীর্ঘদিন চিহ্নিত নারী মাদক কারবারীদের তালিকা বিশ্লেষন করে এমনটাই পাওয়া গেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক কারবারীদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলছে।

তথ্য মতে, গত ৭ই জুন মঙ্গলবার ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য গাঁজা ও ইায়াবা ট্যাবলেটসহ এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এর সদস্যরা। সবুজবাগ এলাকায় তাদের ঘর থেকে মো. বিল্লাল ও তার স্ত্রী নাজমা বেগমকে মাদকসহ হাতে নাতে আটক করা হয়। এছাড়াও ওই এলাকায় ৩০ পুড়িয়া হেরোইন ও মাদক বিক্রি নগদ টাকাসহ আরেক আলোচিত নারী মাদক বিক্রেতা রুমীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রুমী ও নারী মাদক বিক্রেতা মোবাইল পারভীনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয়।

চাঁনমারী এলাকার আলোচিত নারী মাদক কারবারী মোসা. রুমী আক্তারের গ্রেপ্তারের দুই দিন পরই আরো এক আলোচিত নারী মাদক বিক্রেতা লাকী আক্তার শিরিন ওরফে লাকীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গেল শুক্রবার দিবাগত রাতে ফতুল্লার শারজাহান রোলিং মিলস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লাকীকে। এ সময় পুলিশ লাকীর হেফাজত থেকে ২ কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রির নগদ ৩০ হাজার ৬শ ৪০ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এরআগে ফতুল্লার মাহমুদপুর থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই নারী মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো লিপি মেম্বারের বাড়ীর রাব্বি মিয়া ওরফে রনির স্ত্রী বর্ষা আক্তার (২০) ও একই এলাকার পশ্চিম রেসকোর্সের মমিনের স্ত্রী লাকী বেগম (২০)। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে তাদেরকে ফতুল্লা থানার মাহমুদপুরস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাছাড়া কাশিপুরের মধ্য নরসিংহপুর এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৯১ পিস ফেন্সিডিল সহ আলোচিত মাদক কারবারী টুম্পা (২৫) কে আটক করেছিল পুলিশ।

পাশাপাশি সোনারগাঁ থানায় করা মাদক মামলায় চম্পা রানী (৩৫) নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর ছয় বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৫ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক শেখ রাজিয়া সুলতানা এ রায় দেন। তারপরেও কোনভাবে কমছে না এসব নারী মাদক কারবারীদের সংখ্যা।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই করে জানা গেছে, পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর সদস্যরা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে অর্ধশতাধিক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় আটক হওয়া নারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেন্সিডিল, হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। আর ওইসব উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যের অবৈধ বাজার মূল্য কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, আসলে নারী আর পুরুষ যে ই হোক আমরা মাদক কারবারী হিসেবেই দেখি। তবে নারীদের মাদক কারবারীতে অংশগ্রহন কমাতে হলে সকলকে সচেতন হতে হবে। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়। প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকদের প্রথমত খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তানরা কি করছে। তাছাড়া ম্বোাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। তাহলেই কিছুটা হলেও মাদকের সাথে নারীদের সম্পৃক্ততা হ্রাস পাবে।

প্রসঙ্গত, সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহন, উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে পুরুষের চেয়ে কোন অংশেই কম নয় নারীরা। কিন্তু বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে নারীদের প্রবণতায় হতাশায় সচেতন মহল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, অপরাধীরা কৌশল হিসেবে নারীদের মাদক কারবারীতে সম্পৃক্ত করছে। মাদক মামলাগুলো থেকে জানা গেছে, মাদক সংশ্লিষ্টতা এবং মাদক সরবরাহ ও মাদক বহনের অভিযোগে একাধিক নারীর বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত